আতঙ্কের দিনগুলো: টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছেলের কঠিন লড়াইয়ের কথা জানালেন ক্রিসি টিগেন

শিরোনাম: টাইপ ১ ডায়াবেটিস: ছেলেকে নিয়ে কঠিন পথচলার অভিজ্ঞতা জানালেন ক্রিসি টিগেন

সুপরিচিত আমেরিকান মডেল ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ক্রিসি টিগেন সম্প্রতি তার ৬ বছর বয়সী ছেলে মাইলসের টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Bangla: ১ প্রকারের বহুমূত্র রোগ) নিয়ে সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন। গত বছর জুলাই মাসে মাইলসের শরীরে শিংগেলা (Bangla: শিগেলা) সংক্রমণের পর এই রোগ ধরা পরে। ছেলের অসুস্থতা নিয়ে কঠিন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের।

মা হিসেবে ক্রিসি সবসময় সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়েদের স্কুল বা খেলাধুলার সিজন শুরু হওয়ার আগেই আমি তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলি। লুনার (৯ বছর) কোনো অনুষ্ঠানে নাচের প্রস্তুতি থাকলে, তার পোশাক তৈরি করি। জীবনের সবকিছু আমি পরিকল্পনা মাফিক করতে পছন্দ করি।

তবে জীবনের কিছু বিষয় যে সবসময় পরিকল্পনা মাফিক হয় না, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে গত বছর সেটি টের পেয়েছেন তিনি।

মাইলসের ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর তাদের জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। ক্রিসি জানান, “আমরা যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলাম, যেখানে অনেক কিছুই শিখতে হচ্ছিল।

চিকিৎসকেরা জানান, মাইলসের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলে হৃদরোগ, স্নায়ু এবং কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

প্রায় এক বছর পর, টিগেন ও তার স্বামী জন লিজেন্ড তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাইলসের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

টিগেন বলেন, “আমরা হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেছি, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো টুকে রেখেছি।

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর প্রথম দিকে মাইলস খুব হতাশ হয়ে পরেছিল। সে বারংবার জানতে চাইত, কেন শুধু তার এই রোগ হয়েছে, অন্য ভাই-বোনদের কেন হয়নি।

খেলাধুলা করতে পারবে কিনা, আইসক্রিম খেতে পারবে কিনা—এসব নিয়ে তার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল।

মাইলসের চিকিৎসার জন্য টিগেন ও লিজেন্ড ডায়াবেটিস বিষয়ক অনেক বই কিনেছিলেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, হয়তো ছেলের চেয়ে তিনিই শিশুদের উপযোগী বইগুলো বেশি পড়েছেন।

তিনি বলেন, “ছোটদের উপযোগী বইগুলো খুব সহজে বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়।

মাইলসকে ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার সময়টা টিগেনের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল। তিনি বলেন, “আমরা তাকে শান্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, খেলনা দিয়ে ভুলিয়েছি, আইপ্যাড ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছি।

প্রথম তিন মাস আমাদের পরিবারের জন্য খুবই কঠিন ছিল, কারণ আমাদের সন্তানকে ব্যথার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছিল।

টিগেন আরও জানান, এই রোগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের এখনও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কখনো সবকিছু ভালো চললে, আবার কখনো পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পরে।

তিনি বলেন, “শিশুদের বড় করার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

যখন সবকিছু ভালো চলে, তখন ধরে নিতে হবে শীঘ্রই খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। আবার যখন খারাপ সময় আসে, তখন আশা রাখতে হবে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আমাদের পরিবার এখন এই ধরনের পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবেলা করতে শিখে গেছে।

ছেলের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি, টিগেন ও লিজেন্ড তাদের অন্যান্য সন্তানদের প্রতিও খেয়াল রাখছেন।

“এই রোগে পরিবারের সবার উপরেই প্রভাব পরে। লুনা (৯ বছর) খুব শক্ত মেয়ে, সে যেন সবার বস। সে সহজে কিছু বলতে চায় না, কিন্তু রাতে যখন তার মন খারাপ হয়, তখন সে তার অনুভূতির কথা জানায়।

তখন মনে হয়, মাইলসকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাকে বেশি খাবার দেওয়া হচ্ছে,”—বলেন টিগেন।

টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ক্রিসি টিগেন সবসময় একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি চান, তার সন্তানের মতো অন্যরাও তাদের কষ্টগুলো সহজে বলতে পারুক।

মাইলসের রোগ শনাক্ত হওয়ার পর টিগেন ও তার পরিবার বন্ধু-বান্ধব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন।

বর্তমানে তিনি স্যানোফির ‘স্ক্রিন ফর টাইপ ১’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই রোগের প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন।

কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে অনেক ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্ক্রিনিংয়ের খরচও অনেক ক্ষেত্রে কম থাকে।

টিগেন বলেন, “টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই, তবে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা যায়। এটি আমাদের জীবনকে দ্রুত পরিবর্তন করেছে।

তিনি আরও জানান, তার ছেলে এখন বুঝতে পেরেছে, অন্যদের সাহায্য করার জন্য সেও একজন প্রতিনিধি হতে পারে।

গত বছর অলিম্পিক গেমসে তাদের পরিচয় হয় বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় নিক জোনাসের সঙ্গে, যিনি নিজেও টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

টিগেন বলেন, “মাইলসের জন্য এমন একজন মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়াটা অনেক বড় পাওয়া ছিল।

কারণ, এর মাধ্যমে সে বুঝতে পেরেছে, সে একা নয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *