গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব, জিম্মিদের মুক্তি ও বন্দী বিনিময়ের সম্ভাবনা
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে, গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থাপনের লক্ষ্যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রায় দেড় মাস (৪৫ দিন) ব্যাপী যুদ্ধবিরতি হতে পারে, যার বিনিময়ে মুক্তি পেতে পারে ইসরায়েলি জিম্মিরা। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা যায়, সোমবার তারা ইসরায়েলের কাছ থেকে এই প্রস্তাব পেয়েছে। প্রস্তাবটিতে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই সময়ে উভয় পক্ষ একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।
প্রস্তাবে গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্রীকরণের কথাও বলা হয়েছে, যা হামাসের জন্য একটি ‘লাল রেখা’ হিসেবে বিবেচিত। তবে, হামাস চাইছে গ্যারান্টিসহ যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের এমন কোনো প্রস্তাবে তারা রাজি হবে না, যেখানে গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ অথবা ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় প্রবেশের কথা বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাবটি মূলত মার্চ মাস থেকে গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পর জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইসরায়েলের প্রথম পদক্ষেপ। জিম্মিদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সদস্যদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বিশেষ ইঙ্গিত’ হিসেবে ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর আরও ৯ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের বিনিময়ে ১২০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
এছাড়াও, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে আটক হওয়া ১,১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রস্তাবে হামাসের কাছে জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা হবে।
সেই সঙ্গে, ইসরায়েলের হাতে থাকা ১৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ এবং হামাসের হাতে থাকা ১৬ জন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ বিনিময়ের প্রস্তাবও রয়েছে।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ৪৫ দিন’ স্থায়ী হবে। এই সময়ে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে এবং ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
এছাড়াও, ত্রাণ সামগ্রী যেন কেবল বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছে, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রক্রিয়া তৈরির কথাও বলা হয়েছে। গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের প্রস্তাবও রয়েছে।
রবিবার কায়রোতে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে হামাস প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি যে তারা আলোচকদের কোনো দল সেখানে পাঠিয়েছে কিনা।
মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিয়ে আসছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২০ লাখ বেসামরিক মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার কিছু অংশ থেকে সাত দিনের জন্য সরে আসবে, যার মধ্যে রাফা শহরের কিছু এলাকা, উত্তরের কিছু অঞ্চল এবং গাজা শহরের পূর্বাংশও অন্তর্ভুক্ত।
হামাসের ওই কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের প্রস্তাবে ‘গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত’ এবং ‘একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণার’ জন্য আলোচনা শুরু করার কথা বলা হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে শুরু হবে।
আলোচনা সফল হলে, হামাসের হাতে থাকা জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি এই সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে নতুন বন্দীদের বিনিময়ে এর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে, হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যেকোনো প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়, যা ‘আগ্রাসন বন্ধ করা এবং দখলদার বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তবে, শুধুমাত্র বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে একটি খণ্ড খণ্ড প্রক্রিয়ায় যেতে তারা রাজি নয়।
আলোচনাকে এগিয়ে নিতে বর্তমানে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে, হামাস এই প্রস্তাবের বিস্তারিত দিকগুলো এখনো পর্যালোচনা করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন