কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি? এই একটি পেশীই জাদু করতে পারে!

কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে একটি বিশেষ পেশী: বিস্তারিত আলোচনা।

আমাদের দেশে কোমর ব্যথার সমস্যা এখন খুবই সাধারণ একটি বিষয়। দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম অথবা ভুল ভঙ্গিতে বসার কারণে এই ব্যথা হতে পারে।

অনেক সময় আমরা ব্যথার কারণ খুঁজে বের করতে পারি না, যার ফলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আজকের লেখায় আমরা এমন একটি পেশী নিয়ে আলোচনা করবো, যা কোমর ব্যথার মূল কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের কোমরের পেছনের দিকে থাকা ‘পসোয়াস’ (Psoas) নামক পেশীটি (যা কোমর এবং উরুর সংযোগস্থলে অবস্থিত) অনেক সময় কোমর ব্যথার জন্য দায়ী।

এই পেশীটি মেরুদণ্ড এবং পায়ের সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে অথবা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা কোমর, নিতম্ব এবং এমনকি পায়ের কুঁচকিতেও ব্যথার সৃষ্টি করে।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. রিচার্ড লাউয়ের মতে, অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে ‘পসোয়াস’ পেশী সংকুচিত হয়ে আসে এবং এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যায়।

এর ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বিন্যাস (alignment) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোমর ব্যথা শুরু হয়। ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১০.৪ ঘণ্টা বসে কাটায়, যা এই পেশীকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এই পেশী দুর্বল হয়ে গেলে তা কিভাবে বুঝবেন? সাধারণত, ‘পসোয়াস’-এর কারণে হওয়া কোমর ব্যথা কোমর এবং নিতম্বের সংযোগস্থলে অনুভূত হয়।

বসার সময় এই ব্যথা বাড়ে, আবার নড়াচড়া করলে কিছুটা কমে আসে। এছাড়া, একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ‘থমাস টেস্ট’-এর মাধ্যমে কোমর ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেন।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। শারীরিক ব্যায়াম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে কোমর ব্যথা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: কোমর এবং আশেপাশের পেশী শক্তিশালী করতে কিছু ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এর মধ্যে অন্যতম হলো হিপ ফ্লেক্সর স্ট্রেচিং (hip flexor stretching)।
  • এছাড়াও, ক্যাট/কাউ পোজ (cat/cow pose) এবং ৯০/৯০ স্ট্রেচ (90/90 stretch) এর মতো যোগাসনগুলোও বেশ উপকারী।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন: একটানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। প্রতি এক ঘণ্টা পর বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।

প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে কাজ করার ব্যবস্থা করতে পারেন।

  • ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করুন: ঘুমের সময় সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করা প্রয়োজন। উপুড় হয়ে বা একদিকে কাত হয়ে ঘুমানো উচিত না।

চিৎ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে হাঁটুর নিচে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: কোমর ব্যথার সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ফিজিওথেরাপি, আকুপাংচার অথবা অন্যান্য থেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

ডা. রিচার্ড লাউয়ের মতে, কোমর ব্যথার মূল কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকা সম্ভব।

তাই, কোমর ব্যথার সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *