সুইডেনে গ্যাং ক্রাইসিস কমাতে ফুটবল কি পারবে?

শিরোনাম: সুইডেনে গ্যাং সহিংসতা কমাতে ফুটবল: ঝুঁকিপূর্ণ তরুণদের জন্য নতুন দিগন্ত

সুইডেন, উন্নত জীবনযাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে গ্যাং সহিংসতা নামক এক গভীর সমস্যা মোকাবেলা করছে। দেশটির শহরগুলোতে অপরাধ চক্রগুলো ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, আর এর শিকার হচ্ছে সমাজের দুর্বল শ্রেণীর যুবকরা।

সম্প্রতি, এই সমস্যা সমাধানে ফুটবল খেলার মাধ্যমে তরুণদের জীবন পরিবর্তনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চোখে পড়ছে।

উত্তরের শহর উপসালায়, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে শান্তি ও শিক্ষার পরিবেশ বিদ্যমান, সেখানেও গ্যাংগুলির আনাগোনা বেড়েছে।

শহরটির একটি প্রান্তিক এলাকা, গটসুন্ডাতে, প্রতি শনিবার রাতে “নৈশ ফুটবল” নামে একটি বিশেষ আয়োজন করা হয়।

এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা হলেন রবার্ট ওয়াইরাগ, যিনি পেশায় একজন যাজক এবং একসময় স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন।

তাঁর মতে, এই এলাকার যুবকদের গ্যাংয়ে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

ওয়াইরাগ মনে করেন, “যেখানে ভালো কোনো রোজগারের সুযোগ নেই, সেখানেই অপরাধের জন্ম হয়।

যুবকেরা তখন সহজে টাকা উপার্জনের পথ খুঁজে ফেরে, আর গ্যাংগুলো তাদের সেই সুযোগ করে দেয়।” তাই, তিনি ফুটবল খেলার মাধ্যমে তরুণদের একটি সুস্থ এবং ইতিবাচক জীবন দিতে চান।

এই “নৈশ ফুটবল”-এর অন্যতম খেলোয়াড় ১৮ বছর বয়সী আবদুর রউফ আলচাইয়েব, যিনি “আবুদি” নামেই পরিচিত।

তিনি বলেন, “প্রতি শনিবার রাতে এখানে খেলা হয়, যেন মাঠেই যুদ্ধ চলে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ফুটবল না খেললে হয়তো আমি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তাম।

গ্যাংয়ের লোকেরা অল্পবয়সী ছেলেদের সহজে তাদের পথে টানে।”

পুলিশও এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

পুলিশের সাবেক প্রধান হানা প্যারাডিসের মতে, “অপরাধ দ্রুত বাড়ছে।

আগে যেখানে বয়স্ক ব্যক্তিরা অপরাধ করত, সেখানে এখন অল্পবয়সীরাও ঝুঁকছে।

তিনি আরও বলেন, “গ্যাংগুলো এখন তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় জীবনযাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা আসলে মিথ্যা।”

পরিসংখ্যান বলছে, সুইডেনে বন্দুক হামলার ঘটনাও বেড়েছে, যা গ্যাং সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাংগুলো শিশুদেরও ব্যবহার করছে মারাত্মক অপরাধ সংঘটনের জন্য, কারণ শিশুদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা কঠিন।

গ্যাং সহিংসতা কমাতে ফুটবল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।

এই খেলার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে দলবদ্ধতা, শৃঙ্খলা এবং একটি ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন জাগানো সম্ভব।

“নৈশ ফুটবল” সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।

এখানে, তরুণরা শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত হয় না, বরং তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেদের অনুভব করে।

উপসালায় পুলিশের কমিউনিটি অফিসার কারিনা নিউম্যান জানান, “আমরা গটসুন্ডাতে পুলিশের উপস্থিতি বজায় রেখেছি।

এখানে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তবে তরুণদের গ্যাংয়ে যোগ দেওয়া এখনো অব্যাহত আছে।”

স্থানীয় ফুটবল ক্লাব, আই কে সিরিয়াস-এর সহযোগিতায় “ফুটবল উইদাউট বর্ডারস” নামে একটি সামাজিক উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের আওতায়, খেলোয়াড়দের পেশাদার খেলা দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং তাদের সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং তারা একটি ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিকে আকৃষ্ট হয়।

সুইডেনের এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, খেলাধুলা শুধু বিনোদনই নয়, এটি সমাজের গুরুতর সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও, যেখানে যুবকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা একটি উদ্বেগের বিষয়, সেখানে খেলাধুলার প্রসারের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *