ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এখন তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম যাচাইয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, সম্পূর্ণভাবে তা ভেঙে দেওয়ার দাবি করছেন না।
সোমবার এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয় হবে দুটি: প্রথমত, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি যাচাই করা এবং দ্বিতীয়ত, ক্ষেপণাস্ত্রসহ তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার পরীক্ষা করা।
উইটকফ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরিভাবে ভেঙে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, বেসামরিক কর্মসূচি চালানোর জন্য ইরানের ৩.৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে, অন্য মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের কাছ থেকে কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন। উইটকফের ওমানে ইরানীয় আলোচকদের সঙ্গে আলোচনার পরদিন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ তেহরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইরানকে আলোচনার টেবিলে এসে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিতে হবে। এর আগে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।
তবে ইরানের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে দুর্বল করতে এবং ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপনের অভিযোগ করেছেন।
জাতিসংঘের একটি চুক্তির অধীনে ইরান বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
পারমাণবিক শক্তি এবং বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম একটি শক্তিশালী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গত শুক্রবার, ইরানের আধা-সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগে ইরান কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে।
তাদের ‘রেড লাইন’-এর মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘হুমকি ও আক্রমণাত্মক’ ভাষা ব্যবহার এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘অতিরিক্ত’ দাবি জানানো।
এছাড়া, ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো উত্থাপন করা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বিরত থাকতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের নিরাপত্তা জন্য হুমকি স্বরূপ।
উইটকফ গত শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন, যা উভয় পক্ষ ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছে।
১৯ এপ্রিল পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভবত ইতালির রোমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত চুক্তিটি ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের করা চুক্তির থেকে কতটা আলাদা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প অবশ্য এবার একটি ‘আরও শক্তিশালী’ চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছে।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইরানের সঙ্গে একটি লিবিয়ার মতো পারমাণবিক চুক্তি করা।
২০০৩ সালে লিবিয়া তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ার আশা করা হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে গাদ্দাফির শাসনের পতনের পর লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
ইরানের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, তারা এমন কোনও চুক্তি শুরুতেই প্রত্যাখ্যান করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন