যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এক অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করা হয়েছে, যিনি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আটককৃত ব্যক্তির নাম মোহসেন মাহদাউয়ি।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড হোল্ডার ছিলেন এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন।
জানা গেছে, গত সোমবার যখন তিনি নাগরিকত্বের সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে গিয়েছিলেন, তখনই তাকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আটক করেন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও তার পরিচিতির কারণে প্রতিশোধ হিসেবে এই কাজ করা হয়েছে।
মাহদাউয়িকে আটকের পরপরই দেশটির একটি আদালত তাকে ভারমন্ট অঙ্গরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ ভারমন্টের কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মাহদাউয়িকে আটকের নিন্দা জানিয়ে একে ‘অন্যায়, অমানবিক ও অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তারা দ্রুত তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তাকে ন্যায়বিচার দিতে হবে।
মাহদাউয়ির আইনজীবী লুনা দ্রুবি বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলার কারণেই মূলত ট্রাম্প প্রশাসন মোহসেন মাহদাউয়িকে আটক করেছে। গাজায় নৃশংসতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে এবং এটি অসাংবিধানিক।’
নিউ ইয়র্ক থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক ক্রিস্টেন সালোমি জানিয়েছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
সরকার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকি’ এমন যে কাউকে টার্গেট করছে।
পেনসিলভানিয়া ল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধ্যাপক ক্লারি ফিঙ্কলস্টেইন আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে মাহদাউয়ির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা জানি না, তাকে কি ফেরত পাঠানো হবে, নাকি প্রশাসন আদালতের আদেশ শুনবে।’
মাহদাউয়ি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফিলিস্তিনি ছাত্র সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। জানা গেছে, গত বছর গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছে।
ইনসাইডহায়ারএড.কম-এর তথ্য অনুযায়ী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এখন পর্যন্ত ১৭০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে।
তুর্কি থেকে আসা তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমিয়া ওজতুর্ক এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা কলম্বিয়ার শিক্ষার্থী ইউনসো চোংকেও আটক করে বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের একটি শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা দর্শন বিভাগের ছাত্র মাহদাউয়ির আগামী মাসে স্নাতক হওয়ার কথা ছিল এবং এরপর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহদাউয়ি জানান, এর আগেও তাকে তার রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
একবার এক বিক্ষোভকারী তাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোকে মেরে ফেলব।’
পশ্চিম তীরে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহদাউয়ি আরও জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তার চাচার ‘হত্যাকাণ্ড’ ঘটিয়েছিল এবং তিনি রাতে তার শরণার্থী শিবিরে নিহত সাত ফিলিস্তিনির ‘দেহাংশ’ সংগ্রহ করেছিলেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা