হ্যারি: বাবার সঙ্গে গভীর ফাটল, রাজপরিবারে ভাঙন!

প্রিন্স হ্যারির নিরাপত্তা বিষয়ক আইনি লড়াই এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে তার বাবা, রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতোই কঠিন অবস্থায় রয়েছে। রাজপরিবারের ভেতরের এই ক্ষত যে এখনো শুকোয়নি, তা স্পষ্ট হচ্ছে।

প্রাসাদের একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, হ্যারি এবং রাজার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পরিস্থিতি এখনো আগের মতোই রয়েছে। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।

প্রিন্স হ্যারি, যিনি বর্তমানে ৪০ বছর বয়সী, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের আদালতে নিজের নিরাপত্তা ফিরে পাওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২০ সালে তিনি এবং মেগান মার্কেল রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে আসার পর তার সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছিল। হ্যারির মতে, এই নিরাপত্তা কমানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে এবং মেগানকে নিয়ন্ত্রণে আনা। তাদের রাজকীয় জীবন থেকে দূরে যেতে এবং যুক্তরাজ্যের বাইরে নতুন জীবন শুরু করতে নিরুৎসাহিত করাই ছিল এর লক্ষ্য।

হ্যারি মনে করেন, সরকারি নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল প্রাসাদের গভীর চক্রান্তের একটি অংশ। তিনি বলেন, এই বিষয়টি মেনে নেওয়া তার জন্য খুবই কঠিন ছিল এবং এর ফলে বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।

এসবের মধ্যেই হ্যারি মনে করেন, তার বাবা, যিনি দেশের আনুষ্ঠানিক প্রধান, চাইলেই তার নিরাপত্তা পুনর্বহাল করতে পারেন। যদিও প্রাসাদ কর্তৃপক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বাবা ও ছেলের মধ্যে মানসিক দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তাদের সর্বশেষ সাক্ষাত হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য। সে সময় কুইন ক্যামিলাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তিগত আলোচনা হয়নি।

হ্যারি জানিয়েছেন, তিনি তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি। এমনকি, গত মার্চ মাসে রাজার অসুস্থতা এবং হাসপাতালে ভর্তির খবরও তিনি সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারেন।

হ্যারি যখনই যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন, তখনই রাজা চার্লস বিভিন্ন কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এমনকি, রাজার ইতালিতে রাষ্ট্রীয় সফরের কারণে হ্যারির আদালতের শুনানির দিনও তিনি সেখানে ছিলেন না।

হ্যারি এখনো তার বাবার শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না।

হ্যারি ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা, রাজা ইচ্ছাকৃতভাবে দূরত্ব বজায় রাখছেন, সম্ভবত নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আলোচনায় জড়াতে চান না বলেই এমনটা করছেন।

এই বিষয়ে রাজপরিবারের লেখক স্যালি বেডেল স্মিথ বলেন, “এই আইনি লড়াই হ্যারিকে সরাসরি রাজার আদেশ পালনকারীদের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি তার বাবা কোনো সামান্য কথা বলেন, তবে তা মামলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।”

তবে প্রাসাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একটি সূত্র জানাচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবন এবং সরকারি দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য করা যেতে পারে, কিন্তু পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে আছে।

ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গেও হ্যারির সম্পর্ক ভালো নয়। উইলিয়ামও হ্যারির ফোন বা মেসেজের জবাব দেননি।

হ্যারি এখনো তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চান, তবে আস্থার অভাব একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’-এ ব্যক্তিগত কথোপকথন এবং পুরনো মনোমালিন্যের কথা প্রকাশ পাওয়ায় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বেডেল স্মিথের মতে, এসব বিষয় গোপন রাখা উচিত ছিল।

অন্যদিকে, হ্যারি চান তার সন্তান আর্চি ও লিলিবেট তাদের ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হোক এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুক।

আদালতের শুনানির অনেক কিছুই গোপন রাখা হয়েছে, তবে হ্যারি শুনানিতে আসা কিছু তথ্য শুনে মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বলেন, “যা গোপন করা হচ্ছে, তা শুনলে অনেকে অবাক হবেন।”

হ্যারি তার আইনি দলের কাছ থেকে জেনেছেন, মামলার ফলাফল নিয়ে তারা “সতর্কভাবে আশাবাদী”। খুব শীঘ্রই এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

আইনি লড়াইয়ের ফল যা-ই হোক না কেন, হ্যারি অবিচার প্রকাশ করতে এবং সমস্যাগুলো সমাধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মেগান বা তাদের সন্তানদের কিছু হলে তিনি কিছুতেই শান্ত থাকতে পারবেন না।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, “তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এটি এমন কিছু, যার জন্য তাকে লড়াই করতে হবে।”

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *