হলিউডের কুখ্যাত প্রযোজক হার্ভে উইনস্টিনের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁর সাজা বাতিল হয়ে যাওয়ায়, নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। #MeToo আন্দোলনের ঢেউয়ের মাঝে, এই মামলার রায় বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল।
২০২০ সালে উইনস্টেনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর নিউ ইয়র্কের একটি আদালত তাঁর সাজা বাতিল করে দেয়। আদালতের মতে, মামলার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত একটি ত্রুটিপূর্ণ বিচার করেছে।
এই পুনরায় বিচার উইনস্টিনের জন্য নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আরেকটি সুযোগ। অন্যদিকে, অভিযোগকারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ বর্তমানে আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট অনেক বদলে গেছে।
উইনস্টনের বিরুদ্ধে তিনজন নারী পুনরায় সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক প্রযোজনা সহকারী মিমি হ্যালি। ২০০০ সালের শুরুর দিকে তিনি উইনস্টেনের একটি টেলিভিশন শো-তে কাজ করতেন। প্রথম বিচারে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং এবারও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আদালতে হাজির হবেন। তাঁর আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেড সিএনএনকে জানান, “এই কঠিন সময়ে তাঁর সাহস সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
এই বিচারের সময় প্রসিকিউটররা (সরকারি কৌঁসুলি) নতুন একজন অভিযোগকারীকে যুক্ত করেছেন। ওই নারীর অভিযোগ, ২০০৬ সালে ম্যানহাটনের একটি হোটেলে উইনস্টেন তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন। এই নতুন সাক্ষীর আইনজীবী লিন্ডসে গোল্ডব্রাম সিএনএনকে বলেন, “তিনি অত্যন্ত সাহসী একজন নারী।
উইনস্টেনের প্রথম বিচার ব্যাপক মিডিয়া কভারেজের শিকার হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রতিবাদে আদালতের বাইরে বিক্ষোভকারীরা নিয়মিত জমায়েত হতেন। উইনস্টেনের আইনজীবী আর্থার এইডালা জানান, “আশা করা যায়, জুরিরা তাঁদের মন খোলা রাখবেন এবং আদালতের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেবেন, বাইরের কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।
উইনস্টেনের আইনজীবীরা বলছেন, #MeToo আন্দোলনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছিল এবং এর ফলে বিচার প্রভাবিত হয়েছে। তবে, অভিযোগকারী তিন নারী তাঁদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বিষয়ে অবিচল রয়েছেন। তাঁদের দাবি, উইনস্টেন তাঁদের যৌন নির্যাতন করেছেন। উল্লেখ্য, ১০০ জনের বেশি নারী উইনস্টেনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।
উইনস্টেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের রিকার্স আইল্যান্ড কারাগারে বন্দী আছেন। এর আগে, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২০১৬ বছরের কারাদণ্ড পান। জানা গেছে, ৭৩ বছর বয়সী উইনস্টেন হৃদরোগে আক্রান্ত এবং কারাগারে তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
হার্ভে উইনস্টিনের স্বাস্থ্য দ্রুত খারাপ হচ্ছে এবং রিকার্স আইল্যান্ডের পরিবেশ তাঁর স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাঁর আইনজীবী জুডা এঙ্গেলমেয়ার সিএনএনকে জানিয়েছেন, “এটি শুধু অস্বস্তির বিষয় নয়, এটি একটি গুরুতর চিকিৎসা সংকট।
উইনস্টেনের এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে, কর্মক্ষেত্র এবং বিচার ব্যবস্থায় নারীদের অধিকার আদায়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা স্পষ্ট হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন