গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১, আহত ৯
গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং আরও নয়জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার খান ইউনিসের কাছে আল-মুওয়াসির কুয়েতি ফিল্ড হাসপাতালের প্রবেশমুখে এই হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য তৈরি তাঁবুর কাছে থাকা হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় কয়েক লক্ষ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি খোলা আকাশের নিচে, বালুমাঠের পাশে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান জোরদার করার পর তারা তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। এর মধ্যে রাফা শহরও রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে, রবিবার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাসপাতালটির একাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর সেখানে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল গত ১৮ মাস ধরে গাজার হাসপাতালগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে। তাদের দাবি, হামাস জঙ্গিরা হাসপাতালগুলোকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করে। যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গাজায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে।
গাজায় কর্মরত ডাক্তাররা বলছেন, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন আর নেই। আল-আহলি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. মুয়াজ হারারা বলেন, “বারবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর হামলার কারণে চিকিৎসা দলের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মতে, গাজায় পরিস্থিতি “সহিংসতা শুরুর ১৮ মাসের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ।” মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যুদ্ধাপরাধের শামিল।
ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান পুনরায় শুরু করেছে। এতে প্রায় চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ১,৬০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, এই কৌশল কাজ করছে এবং এর ফলে হামাস জিম্মিদের বিষয়ে একটি চুক্তিতে আসতে বাধ্য হবে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় প্রায় ৫১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ফিলিস্তিনিদের জীবন “ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে”। তারা আরও বলেন, “বোমা বা বুলেটে নিহত না হলেও, মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান