শিরোনাম: ক্যান্সারের উপসর্গকে অবজ্ঞা: মেয়ের চিকিৎসার ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুললেন ব্রিটিশ মা।
গ্যাটসহেডের বাসিন্দা জেন কেলি নামের এক ব্রিটিশ নারী তাঁর মেয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
২০১৬ সালে তাঁর মেয়ে, মেগান কেলির শরীরে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে চিকিৎসকেরা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এই অবহেলার ফলস্বরূপ, ২০১৯ সালের জুন মাসে জানা যায়, মেগান চতুর্থ স্তরের ইউয়িং সারকোমা নামক বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে, ১৬ বছর বয়সী মেগান বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি ভাইরাসে ভুগছিল। এর সঙ্গে ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশনও হতে থাকে।
শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হয়। জেন জানান, তিনি মেয়েকে নিয়ে বহুবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। প্রথমে ডাক্তাররা জানান, মেগানের গ্রন্থি জ্বর, স্কারলেট ফিভার বা ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। কিন্তু মেয়ের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
জেন বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল, গুরুতর কিছু একটা হয়েছে। কারণ, আমি নিজেও ৩২ বছর বয়সে হজকিন লিম্ফোমা (Hodgkin lymphoma) নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলাম।
আমার রোগ শনাক্ত হতে এক বছর লেগেছিল। মেয়ের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম।”
কিন্তু ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী, প্রথমে তিনি মেয়ের সাধারণ ভাইরাস হয়েছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কারণ, একজন মা হিসেবে মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে—এই ধারণা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল।
২০১৯ সালে মেগানের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এমন অবস্থায়, একদিন একটি ওয়াক-ইন ক্লিনিকে (walk-in clinic) নিয়ে গেলে ডাক্তার জেনকে জানান, মায়েদের ক্ষেত্রে শিশুদের নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা দেখা যায়।
অবশেষে, ২০১৮ সালের জুন মাসে, ১৮ বছর বয়সে, ডাক্তাররা মেগানের আসল রোগটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তার কিডনিতে একটি টিউমার রয়েছে, যা আসলে ক্যান্সার।
ছয় সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, মেগান চতুর্থ স্তরের ইউয়িং সারকোমা নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত। সাধারণত, তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে এই ক্যান্সার দেখা যায়।
চিকিৎসকেরা জানান, সম্ভবত দু’বছর ধরে মেগানের শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল এবং ততদিনে তা ফুসফুস ও লিম্ফ নোডগুলোতে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
জেন বলেন, “মেগান ছিল খুবই প্রাণবন্ত, শক্তিশালী, দৃঢ়চেতা এবং সবকিছুর সমাধান খুঁজে বের করতে পারদর্শী।
রোগ সম্পর্কে জানার পর প্রথমে সে কেঁদেছিল, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিলো, ‘তাহলে এখন আমরা কী করব?’”
চিকিৎসার অংশ হিসেবে মেগানকে বেশ কয়েক দফা কেমোথেরাপি (chemotherapy) দেওয়া হয়। জেন মেয়ের পাশে থেকে সবসময় তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
২০২০ সালের জুন মাসে, মেগানকে জানানো হয়, সে এখন রোগমুক্ত। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, ক্যান্সার ফিরে আসলে, তাঁদের আর কিছু করার থাকবে না।
দুর্ভাগ্যবশত, দুই মাসের মধ্যেই মেগানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ডাক্তাররা জানান, ক্যান্সার আবার ফিরে এসেছে এবং এবার তাদের কিছুই করার নেই।
এরপর তারা মেগানকে জানায়, তার হাতে এক বছর সময় আছে। জেন বলেন, “মেগান এতটুকু বিচলিত হয়নি। যদিও আমি চেয়েছিলাম মেয়ের সামনে কাঁদব না, কিন্তু পারিনি।
তখন মেগান আমাকে বলল, ‘মা, আমি ঠিক আছি। আমি এই মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত। আমি শান্তিতে আছি।
এরপর মেগানকে ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করার জন্য স্বল্পমাত্রার কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
ডাক্তার জেনকে জানান, মেগানের আর কয়েক দিন বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা মেগানকে বিষয়টি জানাননি। তারা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কারণ, মেগানের শেষ ইচ্ছা ছিল, সে নিজের বাড়িতেই মারা যাবে।
ডিসেম্বর, ২০২০-এ ১৯ বছর বয়সে মেগান মারা যায়।
মৃত্যুর আগে মেগান তার মাকে বলে গিয়েছিলো, সে চায়, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য সচেতনতা বাড়াতে এবং চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে।
মেয়ের মৃত্যুর পর জেন এবং তাঁর পরিবার ‘মেগান’স রোজ অফ হোপ’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা তৈরি করেন, যা ১১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ক্যান্সার আক্রান্তদের সহায়তা করে।
জেন বলেন, “মেগানের সামনে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ ছিল। ও খুব মিশুক, সুন্দরী, দয়ালু এবং হাসিখুশি ছিল। আমি প্রায়ই ভাবি, আজ ও কোথায় থাকত।
আমি আশা করি, আমরা মেয়ের নামে যা করছি, তাতে ও গর্বিত হবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।