ইসরায়েলে তোলপাড়! নিরাপত্তা প্রধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ!

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন দেশটির মন্ত্রীরা। কর্মকর্তাদের দাবি, নিরাপত্তা প্রধান রনেন বার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন।

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া এক শিন বেট এজেন্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই এজেন্টকে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কিছু গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে, ওই এজেন্ট শিন বেট-এর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেশ কয়েকবার গোপনীয় তথ্য অননুমোদিত ব্যক্তিদের কাছে সরবরাহ করেছেন। ইসরায়েলের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর সমতুল্য শিন বেট হলো দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা।

এই ঘটনার জেরে সরকারের সঙ্গে শিন বেট প্রধান রনেন বার-এর সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। বার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

মন্ত্রীদের অভিযোগ, বার সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পরিকল্পিতভাবে বেশ কয়েকটি তদন্ত শুরু করেছেন, যার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কাতার-গেট কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ার পরেই এই মতানৈক্য চরম আকার ধারণ করে।

এই কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছেন।

মঙ্গলবার শিন বেট এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে, তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে এবং এজেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের দ্বারা গোপনীয় তথ্য ফাঁসের ঘটনা বেড়েছে।

এ পর্যন্ত তথ্য ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০টির বেশি তদন্ত করা হয়েছে।

গত মাসে নেতানিয়াহু বার-এর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন বলে জানান। তবে বিরোধী দল বার-এর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

অভিযুক্ত এজেন্টের আইনজীবীরা বলছেন, তিনি যে তথ্যগুলো একজন মন্ত্রী এবং দুজন সাংবাদিকের কাছে সরবরাহ করেছেন, সেগুলো জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তা জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি ছিল না।

যে মন্ত্রী তথ্য পেয়েছিলেন, সেই আমিচাই চিকলি অভিযুক্ত এজেন্টকে একজন ‘নায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। চিকলির দাবি, বার ‘একজন মন্ত্রীর ওপর গোপন নজরদারি চালাতেন’ এবং এজেন্ট প্রকাশ করেছেন যে, শিন বেটের তদন্তে গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও বিকৃত চিত্র উপস্থাপন করে।

অর্থ মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই গ্রেপ্তারিকে ‘সরকার উৎখাতের চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বারকে একজন ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বার এই সংস্থার গোয়েন্দা ও তদন্তের সরঞ্জাম রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ব্যবহার করেন।

সরকার গত মাসে বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেও সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের আপত্তির কারণে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন, বিশেষ কমিটির অনুমোদন ছাড়া এই বরখাস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না।

নেতানিয়াহুর দল লিকুড অভিযুক্ত এজেন্টকে একজন হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে তুলে ধরেছে, যিনি বার কীভাবে ‘শিন বেটের অংশকে একটি গভীর রাষ্ট্রের ব্যক্তিগত মিলিশিয়াতে পরিণত করেছেন’ তা প্রকাশ করেছেন।

দলটি অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারার সঙ্গে বার-এর যোগসাজশের অভিযোগ করেছে, যিনিও ডানপন্থী মহলের সমালোচনার শিকার।

অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বার-এর সমর্থনে এগিয়ে এসে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণগুলো ‘তাঁর এবং শিন বেট সদস্যদের জন্য একটি বিপজ্জনক রক্তক্ষয়ী প্রক্রিয়া, যারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা করেন’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা কাতার-গেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আদালতের নথি থেকে জানা যায়, শিন বেট কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়া নেতানিয়াহুর দুই সহযোগী কাতার থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং দেশটির পক্ষে গণমাধ্যমে ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

ইসরায়েলের বামপন্থী ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতা ইয়ার গোলান বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু যখন কাতারের সঙ্গে সমস্যায় পড়েন, তখন তিনি তদন্তকারীকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেন। নিজেকে এবং তাঁর মুখপাত্রদের বাঁচাতে তিনি সবকিছু করবেন।

নেতানিয়াহু ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক।’ তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *