চীনের বাজারে বোয়িং-এর বিমান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেয়ারের দর পতন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে বোয়িং কোম্পানির বিমান সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীন। এর ফলস্বরূপ, মঙ্গলবার শেয়ার বাজারে বোয়িং-এর শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ব্লুমবার্গ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের এয়ারলাইন্সগুলোকে বোয়িং-এর কোনো বিমান গ্রহণ না করার নির্দেশ দিয়েছে।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বোয়িং। বাজারে লেনদেন শুরুর দিকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দর ২ শতাংশ কমে যায়। তবে এর আগে বাজার খোলার প্রাক্কালে এই পতন আরও বেশি ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষ, বোয়িং অথবা হোয়াইট হাউস কেউই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানির জন্য একটি বড় ধাক্কা। ২০১৮ সাল থেকে বোয়িং বার্ষিক মুনাফা অর্জন করতে পারেনি এবং সেই সময় থেকে প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলার পরিচালন লোকসান হয়েছে। চীনের বাজার বোয়িং-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা বিমানের বৃহত্তম ক্রেতা। বোয়িং-এর নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, আগামী ২০ বছরে চীনের এয়ারলাইন্সগুলো প্রায় ৮,৮৩০টি নতুন বিমান কেনার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিতর্কের কারণে বোয়িং বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানির থেকে ভিন্ন, বোয়িং তাদের বিমানের প্রায় সব যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় তৈরি করে। প্রস্তুতকৃত বাণিজ্যিক বিমানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে। এই কারণে বোয়িং আমেরিকার বৃহত্তম রপ্তানিকারক।
বোয়িং আমেরিকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোম্পানিটির হিসাব অনুযায়ী, তারা বছরে প্রায় ৭৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রাখে এবং সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কর্মী কাজ করে।
তবে ২০১৯ সাল থেকে বোয়িং কার্যত চীনের বাজার থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুরু হওয়া বাণিজ্য উত্তেজনাকে দায়ী করা যেতে পারে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বোয়িং চীনা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১২২টি বিমানের অর্ডার পেয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে গত ছয় বছরে তারা মাত্র ২৮টি বিমানের অর্ডার পেয়েছে, যা প্রধানত মালবাহী বিমান অথবা চীনা লিজ কোম্পানিগুলোর জন্য ছিল। চীনা এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে যাত্রী বিমানের কোনো অর্ডার তারা পায়নি।
বাণিজ্যিক উত্তেজনার পাশাপাশি বোয়িং-এর নিজস্ব কিছু সমস্যাও এর কারণ। ২০১৮ সালের শেষের দিকে এবং ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তাদের বহুল বিক্রিত ৭৩৭ ম্যাক্স (737 Max) বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই দুটি দুর্ঘটনার পর চীনে বিমান সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বিমান দুর্ঘটনার কারণে চীনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই মডেলের বিমানগুলো গ্রাউন্ডেড করে দেয় এবং ২০২০ সালের শেষ দিকে অন্যান্য দেশগুলোতে এই বিমান যাত্রী পরিবহনের জন্য পুনরায় চালু করা হলেও চীন সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি দেয়নি। ফলে, গত বছর থেকে সরবরাহ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে।
বিমান সরবরাহ বোয়িং-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিমান সরবরাহ করার পরেই তারা অর্থ পায়। কোম্পানিটি প্রথমে বিমান তৈরি করে এবং চূড়ান্ত পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরেই তারা তাদের পাওনা পায়। বর্তমানে বোয়িং-এর প্রায় ৫৫টি বিমান তৈরি হয়ে আছে, যা তারা গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতে পারছে না। মূলত চীন এবং ভারতের গ্রাহকদের কাছেই এই বিমানগুলো সরবরাহ করার কথা ছিল।
শুল্ক আরোপের আগেও, চীনে বোয়িং-এর বিক্রি কমে যাচ্ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে চীনের গ্রাহকদের জন্য বোয়িং-এর বিমান কেনা কঠিন হয়ে পড়েছিল, এমনকি সরবরাহ সীমিত না করা হলেও।
তথ্য সূত্র: সিএনএন