সিটি স্ক্যান (CT Scan)-এর তেজস্ক্রিয়তা: ভবিষ্যতে ১ লক্ষেরও বেশি ক্যান্সার রোগীর আশঙ্কা, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, শুধু ২০২৩ সালে করা সিটি স্ক্যানগুলোর তেজস্ক্রিয়তার কারণে ভবিষ্যতে ১ লক্ষেরও বেশি ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল ‘জামা ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণা বলছে, উন্নত বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৬ কোটি ২০ লক্ষ রোগীর ক্ষেত্রে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যান করার সময় শরীরের ভেতরে প্রবেশ করানো তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি স্ক্যান একটি অপরিহার্য এবং বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক, তবে এর তেজস্ক্রিয়তা রোগীর শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যান্সার) এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য।
শিশুদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড, ফুসফুস এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।
গবেষণে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি স্ক্যানের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখা যায়। অনেক সময় রেডিওলজিস্টরা (রশ্মি-বিশেষজ্ঞ) রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ড. রেবেকা স্মিথ-বিন্ডম্যান এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সিটি স্ক্যান একটি অত্যাশ্চর্য প্রযুক্তি, তবে আমাদের এটি সবচেয়ে নিরাপদ উপায়ে ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশেও সিটি স্ক্যানের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন সহজেই এই পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সিটি স্ক্যানের তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি এবং এর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। রোগীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা দরকার, যাতে তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিটি স্ক্যান করা থেকে বিরত থাকেন।
সেই সঙ্গে, চিকিৎসকদেরও এই বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে এবং তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি স্ক্যানের সুবিধা অনেক, কিন্তু এর ঝুঁকি সম্পর্কেও আমাদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: JAMA Internal Medicine