ফেসবুক ভাঙতে পারে! জাকারবার্গ এখন আদালতের মুখোমুখি!

মার্ক জাকারবার্গ আবার আদালতের কাঠগড়ায়, মেটাকে ভেঙে দেওয়ার সম্ভবনা।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা চলছে।

এই মামলার শুনানিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিয়েছেন মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ।

মূলত, মেটা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা একচেটিয়া ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগীতা আইন লঙ্ঘন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) এই মামলাটি দায়ের করেছে, যা প্রায় ছয় বছর ধরে চলা তদন্তের ফল।

তাদের মূল অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট মেটা, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা আইন ভেঙেছে।

এই মামলার রায় মেটার ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবং একই সঙ্গে এই জনপ্রিয় পরিষেবাগুলো আলাদা কোম্পানি হিসেবে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, সম্ভবত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের প্রয়োগ কিছুটা শিথিল হবে।

তবে, এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।

শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পের কাছে তদবির করার জন্য জাকারবার্গ একাধিকবার হোয়াইট হাউজে গিয়েছেন এবং ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে অর্থ দান করেছেন।

এছাড়াও, তিনি ওয়াশিংটনে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হয়।

তবে, এফটিসি মেটার বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এফটিসি চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ফার্গুসন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারা মেটা’র মতো কোনো একচেটিয়া কারবারীকে আর সুযোগ দেবে না।

এই মনোভাব সাবেক এফটিসি চেয়ারওম্যান লিনা খানের মতোই, যিনি জো বাইডেনের আমলে প্রযুক্তি জায়ান্টদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পরিচিত ছিলেন।

এই মামলার কারণে ফেসবুকের মালিককে হয়তো ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হতে পারে।

উল্লেখ্য, অধিগ্রহণের পর এই দুটি প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে এই মামলাটি প্রথম দায়ের করা হয়েছিল।

মামলার কেন্দ্রে রয়েছে ২০১২ সালে ফেসবুকের ১ বিলিয়ন ডলারে ইন্সটাগ্রাম কেনা।

এফটিসি’র দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জাকারবার্গ ইন্সটাগ্রামের উত্থানকে ‘খুবই ভয়ের’ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং এটিকে কিনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কেনার ক্ষেত্রেও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জাকারবার্গ।

তাঁর ভয় ছিল, এই মেসেজিং অ্যাপটি হয়তো অন্য কোনো সামাজিক নেটওয়ার্ক-এ পরিণত হবে অথবা অন্য কোনো প্রতিযোগীর কাছে বিক্রি হয়ে যাবে।

তবে, মেটা’র আইনজীবীরা বলছেন, বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমেই এই দুটি অধিগ্রহণ আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে।

তারা আরও উল্লেখ করেছেন, মেটা’র অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং তাদের কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এফটিসি’র আইনজীবী ড্যানিয়েল ম্যাথেসন সোমবার তার প্রাথমিক মন্তব্যে বলেন, “প্রতিযোগিতা তাদের জন্য কঠিন ছিল, তাই তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে নেওয়াটাই সহজ মনে করেছে।”

মেটা’র আইনজীবী মার্ক হ্যানসেন এর জবাবে বলেছেন, “একটি অর্জিত সংস্থাকে উন্নত ও বৃদ্ধি করার জন্য অধিগ্রহণ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি নয়।”

আদালতের লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এফটিসি কীভাবে মেটা’র বাজারকে সংজ্ঞায়িত করে।

মার্কিন সরকার যুক্তি দেয়, ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম এমন একটি অ্যাপের প্রধান খেলোয়াড়, যা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়।

এই সংজ্ঞায় টিকটক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অন্তর্ভুক্ত নয়।

তবে, মেটা’র পক্ষ থেকে ভিন্ন মত প্রকাশ করা হয়েছে।

তাদের একজন মুখপাত্রের মতে, “এই মামলার শুনানিতে প্রমাণ হবে, বিশ্বের ১৭ বছর বয়সী প্রতিটি ছেলে-মেয়ে যা জানে: ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ চীনা মালিকানাধীন টিকটক, ইউটিউব, এক্স, আইমেসেজ এবং আরও অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।”

যদি এফটিসি মেটাকে ভেঙে দিতে সফল হয়, তবে এটি হবে গত ৪০ বছরে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দেওয়ার প্রথম ঘটনা।

১৯৮০ এর দশকে এফটিসি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এ টি অ্যান্ড টি-কে ভেঙে দিতে বাধ্য করেছিল।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *