ইউরোপে অভিবাসন কমেছে, কিন্তু এর পেছনে কী ভয়ঙ্কর খেলা?

ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, এমনটাই জানাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রনটেক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসন প্রবাহের প্রধান পথগুলোতে এই হ্রাস পরিলক্ষিত হয়েছে।

ফ্রনটেক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং নর্থ মেসিডোনিয়া হয়ে যাওয়া পথগুলোতে এই সংখ্যা ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এছাড়াও, যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও অভিবাসীর সংখ্যা ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, অভিবাসীদের আগমন হ্রাসের পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু নীতির ভূমিকা রয়েছে। তারা মনে করেন, সীমান্ত সুরক্ষার নামে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপগুলো অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর জুডিথ সাদারল্যান্ড জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আরও বিপজ্জনক পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে হবে না। ভূমধ্যসাগরে মানুষ ডুবে মারা যাচ্ছে, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, এমনকি লিবিয়া এবং তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতেও অভিবাসীদের অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার হতে হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাইরের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করছে, বিশেষ করে লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে, যেখানে অভিবাসীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং কারারুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছে।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ECCHR) জানিয়েছে, অভিবাসীদের প্রতি হওয়া এই ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নজরে আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (IOM)-এর তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য নৌকায় করে যাত্রা করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তবে, এই পথে অভিবাসীদের মৃত্যুহার এখনও উদ্বেগজনক।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে, অন্তত ৫৫৫ জন অভিবাসী ভূমধ্যসাগর বা আটলান্টিক পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩,৫০০ জনের বেশি।

ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে প্রায় ৩,৫০০ শিশু ইতালিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। সংস্থাটি নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসন পথের ওপর জোর দিয়েছে, যা অবৈধ অভিবাসনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *