যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘ওয়ারফেয়ার’ : যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
যুদ্ধ সবসময়ই মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, মানুষের কষ্ট আর জীবন-জীবিকার ক্ষতির চিত্র সবসময়ই হৃদয়বিদারক।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ওয়ারফেয়ার’ সেই যুদ্ধের বাস্তবতাকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছে। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন অ্যালেক্স গারল্যান্ড এবং রে মেন্ডোজা।
ইরাক যুদ্ধের একটি বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমাটি।
সিনেমাটির গল্প তৈরি হয়েছে ২০০৬ সালের ১১ই নভেম্বর, ইরাকের রামাদি শহরে সংঘটিত একটি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। এতে আমেরিকান নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল, ‘সিল’ (SEAL) সদস্যদের জীবন এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সিনেমাটির নির্মাতারা যুদ্ধের দৃশ্যগুলো বাস্তবতার সাথে ফুটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেছেন। সিনেমার গল্প, সংলাপ এবং ঘটনার বিন্যাস– সবকিছুই সেনাদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
সিনেমায় যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং সেনাদের মানসিক অবস্থা এতটাই স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
‘ওয়ারফেয়ার’-এর মূল আকর্ষণ এর বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণ। সিনেমাটি যুদ্ধের প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে যুদ্ধের আসল রূপ তুলে ধরেছে।
হলিউডের প্রচলিত যুদ্ধভিত্তিক সিনেমার মতো এতে অতি-নাটকীয়তা বাromance-এর অবতারণা করা হয়নি। বরং যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতাই এখানে মুখ্য।
সিনেমায় সৈন্যদের পোশাক, তাদের অঙ্গভঙ্গি, এমনকি তাদের কথোপকথনও বাস্তবতার কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন চার্লস মেল্টন, কিট কনার, জোসেফ কুইন, কসমো জারভিস, নোয়া সেন্টিনিও, উইল পোল্টার এবং ডি’ফারাহ ওন-আ-তাই-এর মতো অভিনয়শিল্পীরা।
সিনেমাটি নির্মাণ প্রসঙ্গে পরিচালক রে মেন্ডোজা জানিয়েছেন, অ্যালেক্স গারল্যান্ডের সঙ্গে ‘ওয়ারফেয়ার’ তৈরির অভিজ্ঞতা অনেকটা থেরাপিস্টের কাছে যাওয়ার মতো ছিল।
যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং এর মানসিক প্রভাবগুলো এতটাই গভীর যে, এটি সিনেমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সহজ ছিল না।
সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার সময় নির্মাতারা সৈন্যদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই সিনেমায় যুদ্ধের দৃশ্যগুলো ধারণ করার জন্য শব্দ প্রকৌশল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যুদ্ধের শব্দ, যেমন—গুলি, বোমা, সৈন্যদের চিৎকার, এমনকি সাধারণ মানুষের কথোপকথন—সবকিছুই এমনভাবে ধারণ করা হয়েছে যা দর্শকদের যুদ্ধের ময়দানে থাকার অনুভূতি দেয়।
সিনেমাটিতে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং এর মানসিক প্রভাবগুলো এতটাই স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তবে, সিনেমাটি নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নির্বাচনে ইরাকের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট সেভাবে তুলে ধরা হয়নি।
এটি হয়তো নির্মাতাদের ইচ্ছাকৃত সীমাবদ্ধতা ছিল, যা যুদ্ধের একটি ভিন্ন চিত্র দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে।
সিনেমাটি এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছে এবং খুব শীঘ্রই অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাবে।
যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো সাধারণত যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং এর নিষ্ঠুরতা তুলে ধরে। তবে, ‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমার নির্মাণশৈলী, অভিনয় এবং গল্পের বুনন—সবকিছুই দর্শকদের যুদ্ধের অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান