যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক চীনের বাজারে অত্যাধুনিক ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ রপ্তানির ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপের কারণে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্ট এনভিডিয়া।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি) লোকসান হতে পারে। খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা চীনের বাজারে এনভিডিয়ার তৈরি বিশেষ কিছু এআই চিপ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আশঙ্কা করছে, চীনের সামরিক বাহিনী অথবা দেশটির সুপার কম্পিউটার তৈরিতে এই চিপগুলো ব্যবহার করা হতে পারে, যা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। মূলত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের যে লড়াই চলছে, তারই ফলস্বরূপ এই পদক্ষেপ।
এনভিডিয়া জানিয়েছে, তারা বিশেষভাবে চীনের বাজারের জন্য ‘এইচ-২০’ নামের একটি এআই চিপ তৈরি করেছিল, যা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের শর্ত মেনে চলার উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন এই চিপ বিক্রি করতে বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে, যা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করে।
এই ঘোষণার পরপরই শেয়ার বাজারে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমে যায়। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপরও।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স এবং এসকে হাইনিক্স-এর শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়া, এনভিডিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান এএমডি-এর শেয়ারের দামও কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং প্রযুক্তি পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
উন্নত প্রযুক্তির জন্য তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা রয়েছে। যদিও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করেছিল, তবে পরে তা স্থগিত করা হয়।
অন্যদিকে, এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে এআই অবকাঠামো তৈরি করবে। তারা তাদের চিপ ডিজাইন করে এবং তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এনভিডিয়া এবং অন্যান্য এআই চিপ প্রস্তুতকারকদের চীনে তাদের সবচেয়ে উন্নত চিপ বিক্রি করতে বাধা দেয়। এরপর থেকেই চীন সরকারও সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের প্রযুক্তিখাতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ববাজারে প্রযুক্তি পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারেও অনুভূত হবে।
এছাড়া, প্রযুক্তি আমদানি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। তাই, দেশের প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সে অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।