ওকলাহোমা সিটি, ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৫। আমেরিকার বুকে সেদিন এক বিভীষিকার জন্ম হয়েছিল। একটি ট্রাক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল ওকলাহোমা শহরের আলফ্রেড পি. মুর্রাহ ফেডারেল ভবন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬৮ জন, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছিল শিশু। এই ঘটনা আমেরিকার মাটিতে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
ভোর রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী ছিল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন এপির সাংবাদিক ও কর্মীরা। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন হয়তো কাছেই কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু দ্রুতই তাঁরা ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেন।
এপি’র তৎকালীন ওকলাহোমা সিটি সংবাদ সম্পাদক লিন্ডা ফ্রাঙ্কলিন জানান, ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। দ্রুতই খবর সংগ্রহ ও ছবি তোলার জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে যান এপির সাংবাদিকরা। তাঁদের মধ্যে প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছান জুডি গিবস রবিনসন। তিনি জানান, চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর চিৎকার। কাঁচের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর পায়ের জুতাঁজোড়ার কথা আজও মনে আছে তাঁর।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “চারিদিকে মানুষজন শুধু দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিল। সবাই জানতে চাইছে, কি হয়েছে, কোথায় কি হচ্ছে।”
সংবাদ সংগ্রহের এই কঠিন সময়ে, জরুরি অবস্থার কথা মাথায় রেখে ঘটনার ছবি এবং শব্দ রেকর্ড করার জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে শুরু করেন রবিনসন। তাঁর স্মৃতিতে আজও গেঁথে আছে সেই দিনের দৃশ্যগুলো—ধ্বংসস্তূপের পাশে শিশুদের জন্য তৈরি করা একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে অভিভাবকদের কান্নার রোল, আহতদের আর্তনাদ।
সে সময় সেল ফোন খুব একটা প্রচলিত ছিল না। রবিনসন খবর পাঠানোর জন্য একটি ব্যাংকে যান, যেখানে কর্মীরা একটি ল্যান্ডলাইন টেলিফোন বাইরে বের করে রেখেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি প্রথম খবর পাঠান।
সংবাদ অফিসে ফ্রাঙ্কলিন ও অন্যান্য কর্মীরা অবিরাম খবর ও ছবি সরবরাহ করতে থাকেন। বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্র এবং সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে দ্রুত খবর পাঠানোর জন্য তাঁদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেইদিনের কথা বলতে গিয়ে ব্যুরো প্রধান লিন্ডেল হাটসন জানান, “মনে হচ্ছিল যেন আমার অনেকগুলো হাত দরকার।”
ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা চলছিলো অবিরাম। এরই মধ্যে এক অচেনা ব্যক্তি এসে হাজির। তিনি জানান, তিনি একজন শৌখিন চিত্রগ্রাহক এবং ঘটনার কিছু ছবি তুলেছেন। হাটসন ও এপির ফটো সাংবাদিক ডেভিড লংস্ট্রিথ ছবিগুলো দেখেন। একটি ছবি তাঁদের মন ছুঁয়ে যায়—একজন দমকলকর্মী একটি মৃত শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
হাটসন তৎক্ষণাৎ ফটোগ্রাফার চার্লস পোর্টারের কাছ থেকে ছবিটি কিনে নেন। ছবিটি ১৯৯৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জেতে এবং সেই হামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে আজও পরিচিত।
হাটসন বলেন, “আমার মনে হয়, এই ছবিটি ঘটনার ভয়াবহতা হাজারো শব্দের চেয়ে বেশি ফুটিয়ে তুলেছে।”
দিনের শেষে, ওকলাহোমা সিটির এপি অফিসটি সাংবাদিকদের কর্মব্যস্ততায় ভরে গিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাংবাদিক, সম্পাদক ও ফটোগ্রাফাররা এই ঘটনার খবর সংগ্রহের জন্য একজোট হয়েছিলেন। এই ঘটনা তাঁদের পেশাগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস