যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে, কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের একজন সালভাদরের নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হয়, যদিও তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের সাথে বিবাহিত ছিলেন। এই বিতাড়ন প্রক্রিয়াটি নিয়ে পরবর্তীতে আদালতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
বিচারকরা এই পদক্ষেপকে ভুল হিসেবে রায় দিলেও, ট্রাম্প প্রশাসন তাকে ফিরিয়ে আনতে গড়িমসি করে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথম দিকে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্তৃপক্ষ অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে আটক করে। তারা দাবি করে, এক সোর্স তাকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যদিও অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এবং তার আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে, একজন অভিবাসন বিচারক অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর বিরোধিতা করেন, কারণ সেখানে গ্যাংয়ের হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
তবে, তাকে আশ্রয় দেওয়ার আবেদনটি নামঞ্জুর করা হয়।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে, আইস অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে তাকে এল সালভাদরের একটি কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তারা ‘প্রশাসনিক ত্রুটির’ কারণে তাকে ফেরত পাঠিয়েছে, যদিও তারা জানতেন যে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না।
এপ্রিল মাসের শুরুতে, বিচার বিভাগের অ্যাটর্নি ইরেজ রেউভেনি আদালতে স্বীকার করেন যে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে পাঠানো উচিত হয়নি। তবে, কেন তাকে ফেরত আনা হচ্ছে না, সে বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি।
বিচারক জেনিস দ্রুত তাকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন, কিন্তু হোয়াইট হাউস এর বিরোধিতা করে। তারা জানায়, এল সালভাদরের উপর তাদের কোনো এখতিয়ার নেই।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকে যথেষ্ট সম্মান জানানো উচিত। পরবর্তীতে, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানান, রেউভেনিকে তার মন্তব্যের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এখনো এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য নন।
হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে, কর্মকর্তাদের বক্তব্যে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। কেউ কেউ দাবি করেন, তাকে ভুল করে ফেরত পাঠানো হয়নি। বরং, আদালতের নির্দেশ ছিল তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে জানান, তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পারেন না এবং অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতাও তার নেই।
বর্তমানে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এল সালভাদরের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা তার মুক্তির জন্য কাজ করছেন, তবে তাদের এই কার্যক্রম কতদূর সফল হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।