পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনো চলছে। তবে, দেশটির উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়ায় (Khyber Pakhtunkhwa) অনেক আফগান শরণার্থী এখনও তাদের বসতি ছাড়তে নারাজ।
সেখানকার স্থানীয় সরকারও এই বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায়, বহু বছর ধরে এখানে বসবাস করার ফলে অনেক আফগান স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছেন। এমনকি তারা স্থানীয়দের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছেন।
আকবর খান নামের একজন আফগান নাগরিক পেশোয়ার শহরে একটি রেস্টুরেন্ট চালান। তিনি জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এখানে বসবাস করছেন। তার পরিবার এখানেই বড় হয়েছে এবং তাদের পরিবারের ১০ জন সদস্যকে এখানেই কবর দেওয়া হয়েছে।
তাই, এই স্থান ত্যাগ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
পাকিস্তান সরকার এই বছর প্রায় ৩০ লাখ আফগানকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ আফগান খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে বাস করে।
তবে, এখানে কতজন নথিভুক্ত বা কাগজপত্রবিহীন আফগান বসবাস করে, সেই সংখ্যাটি এখনো স্পষ্ট নয়।
এই প্রদেশ থেকে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের কিছু অনীহা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে সীমান্তের দুর্গম এলাকা, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের পরিচালক আব্দুল্লাহ খান মনে করেন, “আফগানদের সম্পূর্ণরূপে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে। কারণ সীমান্তের বেড়া তৈরি করা হলেও, তারা বিভিন্ন অবৈধ পথে অথবা বিদ্যমান আইনের ফাঁকফোকর গলে পুনরায় প্রবেশ করে।”
আফগান শরণার্থীদের খাইবার পাখতুনখাওয়ায় থাকার আরও একটি প্রধান কারণ হলো—ঐতিহ্যগত সম্পর্ক। এই প্রদেশের সঙ্গে আফগানদের জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল রয়েছে।
তাছাড়াও, ১৯৮০-এর দশক থেকে বিপুল সংখ্যক আফগান এখানে এসে বসবাস শুরু করেছেন। এখানকার স্থানীয় সরকারের সহানুভূতিও শরণার্থীদের প্রতি রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার শাসনামলে আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন।
তবে, প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হলেও, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি বেশ ধীর গতিতে চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ হলো—সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া, অধিকার সংগঠন, সাহায্য সংস্থা এবং আফগানিস্তানের তালেবান সরকারও শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে এবং পাকিস্তানকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (IOM)-এর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার আফগান সীমান্ত অতিক্রম করে নিজ দেশে ফিরে গেছে।
এদের মধ্যে অধিকাংশই পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে ফিরেছে, যা সীমান্ত থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। পাঞ্জাবে প্রায় ২ লাখ নথিভুক্ত আফগান বসবাস করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা