এনভিডিয়ার ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ‘এআই’ যুদ্ধ?

যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের প্রযুক্তিগত আধিপত্য রক্ষার উদ্দেশ্যে চীনের বাজারে এনভিডিয়ার (Nvidia) উন্নতমানের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) চিপ রপ্তানির উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলস্বরূপ, প্রস্তুতকারক এই কোম্পানিটির ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

প্রযুক্তি বিশ্বে চীনকে রুখতে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত বছর বাজারে আসা এনভিডিয়ার এইচ২০ (H20) চিপটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে চীনের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিয়মকানুনগুলি মেনে চলা যায়। তবে, নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে, এই চিপ এখন চীনে বিক্রি করতে বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে।

এই পদক্ষেপের ফলে এনভিডিয়ার শেয়ারের বাজারেও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র চায় না চীন অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি তৈরি করে সামরিক এবং অন্যান্য খাতে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াক।

কারণ, এইচ২০ চিপ চীনের ‘ডিপসিক’ (DeepSeek)-এর তৈরি করা ‘আর১’ (R1) নামক চ্যাটজিপিটি-র মতো মডেল তৈরি করতে সহায়তা করেছে। এই মডেলটি তৈরি করতে যে খরচ হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ মডেলগুলির চেয়ে অনেক কম ছিল।

এনভিডিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, তাদের এইচ২০ চিপ এখন চীনে রপ্তানি করতে বিশেষ লাইসেন্স লাগবে।

গত বছর এনভিডিয়ার মোট বিক্রয়ের ১৩ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, প্রথম প্রান্তিকে তারা প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা মূলত এইচ২০ চিপের উৎপাদন, সরবরাহ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির সঙ্গে জড়িত।

শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আর্থিক ক্ষতি তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও, চীনের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনভিডিয়ার জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা।

তাদের মতে, এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, এআই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া একমাত্র কোম্পানি এনভিডিয়াকে চীন বাজারে ব্যবসা করতে এখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর জানিয়েছে, তারা এনভিডিয়ার এইচ২০ এবং এএমডি’র (AMD) তৈরি করা এমআই৩০৮ (MI308) চিপসহ এই ধরনের অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির চীনের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন লাইসেন্সিংয়ের নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশনা অনুযায়ী, তারা দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে, এনভিডিয়া কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের বিধিনিষেধ তাদের ব্যবসা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তারা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যাহত হবে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।

চীনের বাজারে এআই প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে, যেখানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোও তাদের নিজস্ব চিপ তৈরি করতে চেষ্টা করছে।

যদিও চীনের তৈরি করা চিপগুলো এখনো এনভিডিয়ার মতো উন্নত নয়, তবে তাদের উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এনভিডিয়ার উন্নত প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ক্ষমতার কারণে এই দুই পক্ষের মধ্যেকার ব্যবধান ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ভবিষ্যতে আরও বিধিনিষেধ আসতে পারে।

কারণ, উভয় দেশই চাইছে প্রযুক্তির বাজারে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *