আতঙ্ক! কম্পিউটার চিপ ও ঔষধের উপর শুল্ক বসাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কম্পিউটার চিপ, চিপ তৈরির সরঞ্জাম এবং ঔষধ শিল্পের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। দেশটির বাণিজ্য বিভাগ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ক তদন্ত শুরু করেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, তারা কম্পিউটার চিপ, সেগুলোর সরঞ্জাম এবং এই চিপ ব্যবহার করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের আমদানি পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে গাড়ি, রেফ্রিজারেটর, স্মার্টফোনসহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে। ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শুল্ক আরোপ করতে পারেন।

এই তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে কম্পিউটার চিপের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা এবং বিদেশি উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলিংয়ের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও, কম্পিউটার চিপ উৎপাদন অন্য কোনো দেশে কেন্দ্রীভূত হলে কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, বিদেশি সরকারের ভর্তুকি, ‘অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা’ এবং অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ওপর এর প্রভাব নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, ঔষধ, সেমিকন্ডাক্টর এবং গাড়ির মতো বিষয়গুলোতে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আলোচনার সুযোগ নেই। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো দেশেই তৈরি করা নিশ্চিত করা।

ওষুধ শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপের তদন্তে ওষুধ তৈরির উপাদান আমদানির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবহৃত ঔষধের কাঁচামালের ৭০ শতাংশের বেশি আসে ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীন থেকে। যদিও বিশ্বে উৎপাদিত ঔষধের প্রায় ২০ শতাংশ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, দেশটির চাহিদার পরিমাণ প্রায় ৪৫ শতাংশ, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তবে কিছু বিশেষ ধরনের উন্নত চিপের জন্য তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর তাদের নির্ভর করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, তাইওয়ান উন্নত লজিক চিপ উৎপাদনের বাজারে ৯২ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ৮ শতাংশ উৎপাদন করে।

এই পরিস্থিতিতে, চীন থেকে আমদানি করা ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এবং তাদের যন্ত্রাংশ বাবদ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৭৪ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি টাকা) খরচ করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, আগের শুল্কের পাশাপাশি এই ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন (TSMC)-এর মতো বড় চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করতে বড় বিনিয়োগ করছে, তবে সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আনতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে প্রণীত কিছু প্রণোদনার কারণেও তারা এখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়েছে।

অন্যদিকে, মেক্সিকো থেকে টমেটো আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে ২০১৯ সালের একটি চুক্তি থেকে সরে এসেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। তাদের মতে, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকদের ‘অন্যায্য মূল্যের’ টমেটো আমদানি থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, মেক্সিকো থেকে আসা অধিকাংশ টমেটোর ওপর প্রায় ২০.৯১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই পদক্ষেপগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও ঔষধ শিল্পের বাজারে। এর ফলে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, বিষয়টির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *