ঐকমত্যের বদলে ভিন্নমত? লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর নতুন কৌশল!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ তাদের মতামত বিভাগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) ব্যবহার শুরু করেছে, যা বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পত্রিকাটি এখন থেকে একটি নির্দিষ্ট কলামের বিপরীতে, এআই-এর মাধ্যমে তৈরি করা একটি ভিন্নমতও প্রকাশ করছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, পত্রিকার পাতায় বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরা।

পত্রিকাটির মালিক ড. প্যাট্রিক সুন-শিয়ং-এর মতে, এর ফলে একটি নির্দিষ্ট মতের পুনরাবৃত্তি (echo chamber) থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও বিতর্কের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। সুন-শিয়ং ২০১৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস কিনেছিলেন। এর আগে তিনি ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে পরিবর্তনের কথা বলেন।

পত্রিকার এই নতুন উদ্যোগ ‘ইনসাইটস’ (Insights) নামে পরিচিত। কোনো কলামের রাজনৈতিক অবস্থান কেমন, তা বিশ্লেষণ করে এই এআই প্রযুক্তি। এরপর এটি ওই কলামের একটি সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে এবং একইসঙ্গে ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে, যা এআই-এর মাধ্যমেই প্রস্তুত করা হয়।

তবে, এই পদক্ষেপের কারণে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকদের মতে, সুন-শিয়ং-এর এই সিদ্ধান্ত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা। তাঁদের আরও অভিযোগ, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠকের বুদ্ধিমত্তাকে খাটো করা হচ্ছে।

পত্রিকাটির প্রাক্তন সম্পাদকীয় সম্পাদক মারিয়েল গারজা মনে করেন, এই ফিচারটি পাঠকদের এবং লেখকদের প্রতি অপমানজনক হতে পারে। তাঁর মতে, “একটি পক্ষপাতিত্ব পরিমাপক যন্ত্র (bias meter)-এর ধারণা, বুদ্ধিমত্তার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা।

কিছু ক্ষেত্রে ‘ইনসাইটস’-এর কারণে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছে। কলামিস্ট গুস্তাভো আরেলানোর একটি লেখার বিপরীতে, যেখানে কু ক্লুক্স ক্ল্যানের (Ku Klux Klan) একটি সমাবেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, এআই-এর দেওয়া তথ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এতে বলা হয়, কট্টর শ্বেতাঙ্গবাদীদের এই সংগঠনটি (Ku Klux Klan) ১৯২০-এর দশকে শ্বেতাঙ্গ প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য এই ধরনের ভুল তথ্য সরিয়ে নেওয়া হয়।

অন্যদিকে, কলামিস্ট ম্যাট কে লুইস এই ফিচারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, এটি পাঠকদের জন্য অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ধারণা আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করে। লুইস তাঁর কলামকে ‘বামপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর বেশ মজা পেয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবং বিনোদন বিষয়ক লেখক ডেভিড বাউডারের মতে, এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার ভবিষ্যতে সংবাদ পরিবেশনের ধরনকে আরও প্রভাবিত করবে। অনেকের মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও গুরুত্ব দিতে হলে, পত্রিকার উচিত আরও বেশি সাংবাদিক নিয়োগ করা।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *