বাবার স্মৃতি: সুপার মারিও-র মাধ্যমে ফিরে দেখা!

ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো যেন সিনেমার মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যখন বাবার সাথে বসে সুপার মারিও ব্রোস খেলতাম। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের কথা, বাবার হাতে ছিল কন্ট্রোলার, আর আমরা দু’জনে টিভির সামনে।

খেলা চলতো, আর হাসিতে ফেটে পড়তাম—ছোট্ট একটা ‘মাশরুম’ খেয়ে কিভাবে একটা লোক বিশাল হয়ে যায়, সেই দৃশ্য দেখে! বাবা তখন ছিলেন ৩৭ বছরের এক যুবক, আর আমি নিতান্তই শিশু।

হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চলে গেলেন। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পরিবারের অনেক সময় লেগেছিল। কিন্তু বাবার সেই হাসিখুশি, উদ্বেগমুক্ত চেহারাটা আজও আমার মনে গেঁথে আছে।

তাঁর হাতে থাকত একটা কন্ট্রোলার, আর তিনি তখন যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে যেতেন। বছর কয়েক আগে, মা পুরোনো দিনের জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে হঠাৎ করেই খুঁজে পান আমাদের সেই পুরোনো এনইএস (NES) কনসোলটি।

আমাকে ডেকে বললেন, “এটা কি সারানো যায়, বাবা? যদি পারিস, তাহলে অন্তত এটা পরিবারের কাছেই থাকুক।” কনসোলটা তখন ধুলো-ময়লা জমে একেবারে ব্যবহারের অযোগ্য।

কোনো তার নেই, গেমসের কার্তুজগুলোও নেই। অনেক কষ্টে সেটিকে সারাই করা হলো, নতুন করে গেমস কিনে আবার সবকিছু সাজানো হলো। যখন সুইচ টিপলাম, তখন যেন পুরোনো এক জগৎ চোখের সামনে এসে হাজির হলো।

সুপার মারিও ব্রোস ৩-এর একটি লেভেলে, যেখানে দেয়ালের স্পাইকগুলো সবসময় নামছিল, সেখানে জাম্প করার কায়দাটা বুঝতে আমার ১৫ মিনিটের মতো লেগেছিল। বাবার হয়তো তখন ভালো লাগছিল, তাঁর সেই আনন্দটা আমি অনুভব করতে পারছিলাম।

মাইক টাইসনের ‘পাঞ্চ-আউট’ গেমটি খেলতে গিয়েও একই অনুভূতি হয়েছিল। বক্সারের মুভমেন্টগুলো ছিল দারুণ, আর ডেভিডের গোলিয়াথকে হারানোর চেষ্টা যেন আমাকে মুগ্ধ করত।

পুরনো দিনের এই গেমগুলোতে সেভ করার কোনো অপশন ছিল না। তাই বারবার চেষ্টা করে ভুলগুলো শুধরে নিতে হতো, আর সেই চেষ্টাটাই যেন বাবার সাথে আমার একটা যোগসূত্র তৈরি করে দিত।

এই গেমগুলোর মাধ্যমেই আমি যেন বাবাকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি। তাঁর চোখে সবকিছু দেখার সুযোগ হয়েছে। আমার ছেলে যখন ‘ডাকটেলস’ গেমের ফাইনাল বসের সাথে যুদ্ধ জেতার জন্য বাবার মতো অধীর আগ্রহে চেষ্টা করে, তখন মনে হয় যেন বাবার স্মৃতিটা এখনো অম্লান।

বর্তমানে, পুরনো দিনের কনসোলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। নস্টালজিয়া থেকে মানুষজন এই গেমগুলো আবার খেলছে। পুরনো দিনের এইসব গেমগুলো যেন আমাদের সেই সময়গুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে সবকিছু ছিল আরও সহজ, আরও আনন্দের।

হয়তো প্রিয়জনদের স্মৃতিগুলোও এর মাধ্যমে আবার ফিরে আসে। আপনার যদি পুরনো দিনের কোনো কনসোল বা গেম থাকে, তাহলে সেটাকে তুলে ধরুন, খেলুন।

হয়তো প্রিয়জনের স্মৃতিগুলো আবার নতুন করে ফিরে আসবে, যা হয়তো হারিয়ে গিয়েছিল। সুপার মারিও ব্রোসের সেই পরিচিত সুর যখন কানে বাজে, আমি আজও বাবার সাথে সেই সোফায় বসে হাসি—যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *