পহেলা বৈশাখের উৎসব: বিতর্ক আর পরিবর্তনের ঢেউ
পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, বাঙালির জীবনে এক আনন্দময় উৎসব। এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করে।
এবার এই শোভাযাত্রার নামে এসেছে পরিবর্তন, যা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আশির দশকে এর যাত্রা শুরুর সময় শোভাযাত্রাটির নাম ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯৬ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। সম্প্রতি, আয়োজকরা আবার এর পুরনো নামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের মতে, এটি ছিল একটি ‘ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন’। তবে, এই পরিবর্তনে ভিন্ন মতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই পদক্ষেপ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানার শামিল।
শোভাযাত্রাটি মূলত ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে থাকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বর্ণাঢ্য সব প্রতীকী চিত্র, যা বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। নানা রঙের মুখোশ, বাঘ, পাখি, কিংবা লোককথার বিভিন্ন চরিত্র – সবই শোভাযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারীরা পরে লাল পাড় সাদা শাড়ি, পুরুষেরা পরে পাঞ্জাবি।
শোভাযাত্রাটি প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে। সেই সময় এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটানো। বিভিন্ন ধরনের ব্যঙ্গাত্মক চিত্র ও প্রতীকের মাধ্যমে তৎকালীন স্বৈরশাসকের সমালোচনা করা হতো।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রক্ষণশীল ও ইসলামপন্থী কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে এর কিছু অনুষঙ্গ নিয়ে আপত্তি দেখা যায়। তাদের মতে, শোভাযাত্রার কিছু প্রতীক ও অনুষঙ্গ ইসলামি ভাবধারার পরিপন্থী। অতীতে, এই ইস্যুতে আইনি নোটিশও পাঠানো হয়েছিল।
আরেক দল মনে করে, নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের মতে, এর মাধ্যমে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে, যারা এই পরিবর্তনের পক্ষে, তাদের যুক্তি হলো, এটি কোনো দলের নয়, বরং সবার উৎসব। তারা চান, এই শোভাযাত্রা হোক সব বাঙালির, সকল সম্প্রদায়ের মিলনস্থল।
বিশ্লেষকদের মতে, শোভাযাত্রার নামের এই পরিবর্তন বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের একটি অংশ। তারা মনে করেন, এটি দেশের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান পরিবর্তনেরই একটি প্রতিফলন।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা