টিকটকে বিলাসবহুল পণ্যের বন্যা: আসল উৎপাদক কারা? চাঞ্চল্যকর তথ্য!

চীনের কারখানাগুলো টিকটকের মাধ্যমে বিলাসবহুল পণ্য বিক্রি করছে: আসল নাকি নকল?

বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধ যেন এক নতুন মোড় নিচ্ছে। একদিকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক (প্রায় ১৪৫%) আরোপ করেছে, তখন চীনা প্রস্তুতকারকরা টিকটক-এর মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিষয়টি একদিকে যেমন ভোক্তাদের জন্য লোভনীয় অফার নিয়ে এসেছে, তেমনই তৈরি করছে পণ্যগুলোর গুণগত মান ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন।

সম্প্রতি, টিকটকে Wang Sen নামে একজন ব্যবহারকারী নিজেকে বিভিন্ন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের মূল প্রস্তুতকারক (Original Equipment Manufacturer বা OEM) হিসেবে দাবি করে ভিডিও তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি, বার্কিন ব্যাগের মতো দামি পণ্যের ছবি দেখিয়ে, সরাসরি তাদের কাছ থেকে কেনার জন্য ক্রেতাদের উৎসাহিত করছেন।

তার দাবি, সরাসরি তাদের কাছ থেকে কিনলে অনেক কম দামে পণ্য পাওয়া যাবে। যদিও পরবর্তীতে টিকটক কর্তৃপক্ষ এই ভিডিওটি সরিয়ে নেয়, তবে ততক্ষণে ডিএইচগেট (DHgate) এবং চীনের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট Taobao-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলো আসল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, নামকরা ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত তাদের প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে গোপনীয়তা চুক্তি করে থাকে, যার ফলে তারা সরাসরি জনসাধারণের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারে না।

লুলু লেমন (Lululemon) এর মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও ইতোমধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, তারা টিকটকের ওই নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে না এবং ক্রেতাদেরকে নকল পণ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছে।

তাহলে, প্রশ্ন হলো – আসল পণ্যগুলো আসলে আসে কোথা থেকে? অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, নামী ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরির কিছু অংশ চীন থেকে আসে, তবে চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলিং (assembly) সাধারণত ফ্রান্স বা ইতালির মতো দেশে করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, একটি দামি ঘড়ির জটিল যন্ত্রাংশ অথবা ডিজাইন করা হ্যান্ডব্যাগের মোড়ক তৈরির কাজ চীন থেকে আসতে পারে। তবে, সরাসরি চীন থেকে কিনলে পণ্যের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি থাকে।

কারণ, এক্ষেত্রে কোনো ওয়ারেন্টি বা ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকে না।

এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি সরাসরি চীন থেকে আসা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এমনকি Temu এবং Aliexpress-এর মতো সাইট থেকে কম মূল্যের পণ্য কিনলেও, দাম বাড়তে পারে।

কারণ, সরকার $800 ডলারের কম মূল্যের পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় (de minimis exemption) বাতিলের পরিকল্পনা করছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভোক্তাদের মধ্যে তাদের পছন্দের পণ্যের উৎস সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে। একদিকে যেমন চীনা প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কেনার প্রবণতা বাড়ছে, তেমনই পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

কারণ, এই ধরনের কেনাকাটায় ব্যক্তিগতভাবে পণ্য পাঠানোর কারণে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

তাহলে, প্রশ্ন হলো – এই পরিস্থিতিতে একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবে আমাদের করণীয় কী? এক্ষেত্রে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।

কোনো পণ্য কেনার আগে, তার উৎস এবং নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। বিশেষ করে, টিকটক-এর মতো প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাওয়া লোভনীয় অফারগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

কারণ, সস্তায় ভালো মানের পণ্য পাওয়ার আশায় আপনি হয়তো অজান্তেই নকল পণ্যের শিকার হতে পারেন।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *