যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাশিয়ায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার তাদের সামরিক বাহিনীতে লোকবল বাড়ানোর জন্য নতুন করে সেনা সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এতে করে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে চরম ভীতি তৈরি হয়েছে। খবর অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ১ লক্ষ ৬০ হাজার তরুণকে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে জনবল বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সেখানকার তরুণ সমাজের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একদিকে যেমন জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে, তেমনি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিলে যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি অংশ নিতে হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই এই সামরিক প্রশিক্ষণ এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
মস্কোর কাছাকাছি বসবাসকারী ২১ বছর বয়সী বোগদান তেমনই একজন, যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন তার উদ্বেগের কথা। তিনি বলেন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বোগদান বর্তমানে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়লে তাকে জোর করে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
আইনজীবীরা বলছেন, সামরিক বাহিনীতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে সুযোগ থাকলেও, বর্তমানে তা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি, আগে যাদের ছাড় দেওয়া হতো, তাদের অনেকেই এখন আর সেই সুবিধা পাচ্ছেন না।
আগে যেখানে ২৭ বছর বয়স পর্যন্ত যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে এখন তা ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর কথা নয়, তবে তাদের ইউক্রেন সংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
এমনকি, অনেক সময় দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের অজান্তে অনেককে চুক্তিবদ্ধ করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে।
সামরিক প্রশিক্ষণ এড়াতে স্বাস্থ্যগত কারণ, উচ্চশিক্ষা, পারিবারিক সমস্যা, এমনকি মানসিক অসুস্থতার ভান করার মতো বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করার সুযোগ রয়েছে। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াগুলো বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ।
বস্তুত, রাশিয়ার এই সামরিক সদস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনেক তরুণই এখন সামরিক প্রশিক্ষণ এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা