গাজায় ফিলিস্তিনি এবং তাদের সাহায্যকারীদের জন্য গণকবর তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। চিকিৎসা সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটি ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলাকে মানবিক কর্মীদের নিরাপত্তার প্রতি চরম অবজ্ঞা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সংস্থাটির জরুরি বিভাগের সমন্বয়কারী অ্যামান্ডে বাজেরোল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, গাজা এখন ফিলিস্তিনি এবং তাদের সাহায্য করতে আসা মানুষের গণকবরে পরিণত হয়েছে। গত মাসে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর গুলি চালালে ১৫ জন চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মী নিহত হন। আন্তর্জাতিক মহলে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
বাজেরোল আরও বলেন, আমরা সরাসরি দেখছি গাজার পুরো জনগোষ্ঠীর ধ্বংস ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোও রেহাই পাচ্ছে না। এমএসএফের কর্মীরা অনেক কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কিছু কেন্দ্রে কর্মী ও রোগীরা আটকা পড়েছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা নিরাপদে বের হতে পারছেন না।
সংস্থাটি জানায়, ফিলিস্তিনি এবং তাদের সাহায্যকারীদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চরম নিরাপত্তাহীনতা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মানুষ চিকিৎসা পাওয়ার খুব সামান্য সুযোগ পাচ্ছে।
মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরদার করেছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এমনকি ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জরুরি ঔষধ, জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ বলেন, গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কারণ এটি হামাসের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের অন্যতম কৌশল।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা পাঠাতে দেবে না এবং তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে না। ইসরায়েলি বাহিনী নিরাপত্তা অঞ্চলে থাকবে, যা শত্রু ও ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করবে।
জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি নাউর ওদেহ জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কার্যত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। ইসরায়েল চাইছে, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে।
এমনকি হামাস যদি অস্ত্র সমর্পণ করে এবং তাদের ২০০ সদস্যকে গাজা থেকে বিতাড়িত করতে রাজি হয়, তাহলেই কেবল গাজায় তাদের ‘গণহত্যা বন্ধের’ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
অন্যদিকে, হামাস বিভিন্ন বিষয়ে নমনীয়তা দেখালেও, তাদের মতে, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব শেষ না করে অস্ত্র সমর্পণ করা তাদের জন্য ‘রেড লাইন’। তবে হামাসেরও এখন উপায় ফুরিয়ে আসছে। গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, মানুষ আশা ও ধৈর্য হারাচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে। অবরোধ এবং অবিরাম যুদ্ধের কারণে এখানকার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা