ডাচ চিত্রশিল্পী তাঁর বাবা-মায়ের ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’র ছবি প্রকাশ করেছেন, যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মার্টিন রোমার্স সম্প্রতি তাঁর বাবা-মায়ের ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’র একটি মর্মস্পর্শী ছবি প্রকাশ করেছেন। এই ছবি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলা বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা, ক্ল্যাস রোমার্স (৯০) এবং ফেনি রোমার্স-ভিসার (৮৬), তাঁদের মৃত্যুর পর হাতে হাত রেখে শায়িত অবস্থায় রয়েছেন।
রোমার্স জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মা দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি তাঁরা একা হয়ে যাওয়ার ভয়েও ছিলেন। তাঁরা দুজনেই চেয়েছিলেন একসঙ্গে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে, কারণ একে অপরের সঙ্গ তাঁদের কাছে ছিল অপরিহার্য।
নেদারল্যান্ডসে ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’র আইনসম্মত সুযোগ রয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসহনীয় শারীরিক কষ্ট ভোগ করেন এবং আরোগ্য লাভের কোনো সম্ভাবনা না থাকে।
রোমার্সের বাবা-মা’র ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। চিকিৎসকদের বিস্তারিত মূল্যায়নের পর তাঁদের ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’র অনুমতি দেওয়া হয়।
রোমার্স বলেন, এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ ছিল, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সবকিছু দ্রুত ঘটে যায়। তাঁরা একটি তারিখ ঠিক করেন এবং সেই অনুযায়ী, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে, তাঁরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রোমার্স তাঁর বাবা-মায়ের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেছেন, “আমি এবং আমার ভাই, দুজনেই তাঁদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছি। তাঁদের শেষ দিনগুলো আরও আরামদায়ক করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেছি।”
ছবিটি তোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আসলে, আমি একজন পেশাদার চিত্রশিল্পী হিসাবেই তখন কাজ করছিলাম। ছবিটির সঠিক কম্পোজিশন এবং আলোর দিকে খেয়াল রেখেছিলাম।”
ছবিটি তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতির গভীরতা প্রকাশ করে, যা একইসঙ্গে শোক এবং ভালোবাসার মিশ্রণ। তিনি আরও জানান, ছবিটির মাধ্যমে তিনি এই বিষয়ে একটি বৃহত্তর আলোচনা শুরু করতে চান, যা মানুষকে জীবনের এই কঠিন মুহূর্তগুলো সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে।
নেদারল্যান্ডসে ‘সহায়তা-প্রাপ্ত মৃত্যু’র আইন থাকলেও, বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরনের বিষয় এখনো বৈধ নয়। বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রথা প্রচলিত নেই।
মার্টিন রোমার্স বর্তমানে ‘হোমো মোবিলিস’ নামে একটি প্রকল্পের ওপর কাজ করছেন, যেখানে মানুষ এবং তাদের যানবাহনের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাঁর বাবা-মা এই প্রকল্পটি দেখে যেতে পারেননি, যা তাঁর কাছে গভীর দুঃখের কারণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান