গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা: ১ জন নিহত, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়!

গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার কুয়েতি ফিল্ড হাসপাতালের (Kuwaiti Field Hospital) কাছে এই হামলা চালানো হয়।

হামলায় হতাহতদের মধ্যে রোগী এবং চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন। খবরটি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)।

গাজার মুওয়াসি এলাকার (Muwasi area) ওই হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার মানুষের জন্য এটি ছিল একটি বড় আঘাত। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

গাজায় গত ১৮ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েল হাসপাতালগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছে এবং অভিযান চালিয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস (Hamas) জঙ্গিরা হাসপাতালগুলোতে লুকিয়ে আছে অথবা সামরিক উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করছে।

যদিও হাসপাতালের কর্মীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে এবং গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজারের বেশি। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (Health Ministry) এই তথ্য জানিয়েছে।

গত মাসে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি জায়গা তারা দখল করে নিয়েছে।

ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। এতে ১,২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।

এছাড়া ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। এখনো ৫৯ জন জিম্মি গাজায় বন্দী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, জর্ডান (Jordan) সরকার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জর্ডান একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র এবং এখানে এ ধরনের অভিযান খুবই বিরল।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল করা এবং রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারি মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মোমানি (Mohammad al-Momani) জানিয়েছেন, তাদের ২০২১ সাল থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি, বিস্ফোরক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রাখা, ক্ষেপণাস্ত্র লুকিয়ে রাখা এবং অবৈধভাবে লোক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।

জর্ডান সরকার জানিয়েছে, অভিযুক্তদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের (Muslim Brotherhood) মতো ‘লাইসেন্সবিহীন গোষ্ঠীর’ সদস্য। জর্ডানের বিচার বিভাগ ২০২০ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

মুসলিম ব্রাদারহুড এক বিবৃতিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছে এবং জর্ডানের স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষায় তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। উল্লেখ্য, মুসলিম ব্রাদারহুড একটি প্যান-আরব ইসলামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন, যার বিভিন্ন দেশে শাখা রয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হামাস এক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে। হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় তাদের হেফাজতে থাকা ২১ বছর বয়সী মার্কিন-ইসরায়েলি সেনা ইদান আলেকজান্ডারের (Edan Alexander) সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু ওবাইদা (Abu Obeida) মঙ্গলবার জানান, ‘একটি সরাসরি বোমা হামলায় তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা হয়েছে। আমরা এখনো তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’

হামাস এর আগে ওই ২১ বছর বয়সী সেনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যেখানে সম্ভবত তাকে চাপ সৃষ্টি করে কথা বলতে দেখা যায়। ইদান বর্তমানে হামাসের হাতে বন্দী থাকা জীবিত একমাত্র মার্কিন নাগরিক।

হামাস জানায়নি, গাজার ঠিক কোথায় এই হামলা হয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেস এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) মঙ্গলবার উত্তর গাজার সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে তার কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

নেতানিয়াহু এর আগে এই যুদ্ধে বেশ কয়েকবার গাজায় প্রবেশ করেছেন। ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বর্তমানে দুটি পরস্পরবিরোধী চাপের মধ্যে রয়েছেন: ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার চায় তিনি হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি করে তাদের মুক্ত করুন, অন্যদিকে তার ডানপন্থী জোট চায়, জঙ্গীগোষ্ঠীকে নির্মূল করার লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হোক।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিতীয় মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেসের বিশ্লেষণ করা স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, ইউএসএস কার্ল ভিনসন (USS Carl Vinson) এবং তার স্ট্রাইক গ্রুপ আরব সাগরে (Arabian Sea) অবস্থান করছে এবং ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যানের (USS Harry S. Truman) কার্যক্রমকে সমর্থন করছে।

ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা (Houthi rebels) গত কয়েক মাস ধরে ইয়েমেনের (Yemen) জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলাগুলো সম্ভবত ইরানের সঙ্গে আলোচনাকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

মার্কিন নৌবাহিনীর (US Navy) ৫ম নৌবহর, যা মধ্যপ্রাচ্যের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তারা ভিনসনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রাজি হয়নি।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর (Emmanuel Macron) সঙ্গে ফোনালাপে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ‘সন্ত্রাসবাদের জন্য বিশাল পুরস্কার’ হবে এবং এর ফলে ইসরায়েলি শহরগুলোর কাছেই একটি জঙ্গি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল তৈরি হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ এক টুইটে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পুনরায় চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (UN High Commissioner for Human Rights) জানিয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে (Lebanon) অন্তত ৭১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জন নারী ও ৯ জন শিশু রয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *