আতঙ্ক! ট্রাম্প আমলে ভিসা বাতিল: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে?

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, সামান্য কিছু ঘটনা, যেমন – ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হওয়া অথবা পূর্বে খারিজ হয়ে যাওয়া মামলার ভিত্তিতেও শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।

এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে, বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার সুযোগের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

আটলান্টা শহরের ফেডারেল আদালতে দায়ের হওয়া এই মামলায়, ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেকেরই কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানানো হয়নি। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ভিসা বাতিলের এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এমনকি গ্রেপ্তার, আটক ও বিতাড়িত হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।

মামলায় যুক্ত হওয়া ১৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ভারত ও চীনের নাগরিক। এছাড়াও, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং জাপানের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।

মামলার নথিতে, শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতিশোধের ভয়ে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লিয়ন্সের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিবাসন দপ্তর (ICE) শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (SEVIS)- থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এবং চাকরি করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

এই SEVIS মূলত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, কয়েকজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কনেসো স্টেট ইউনিভার্সিটির কলম্বিয়ার এক শিক্ষার্থীর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি পারিবারিক সহিংসতার মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যা পরে খারিজ হয়ে যায়।

মামলার আইনজীবীরা বলছেন, এই ঘটনার জের ধরেই সম্ভবত তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, চীনের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও, পরে সেই মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার এক শিক্ষার্থীকে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর (DUI) অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরে তার সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পর্যন্ত জানাননি। তবে, দেশটির সেক্রেটারি অফ স্টেট মারকো রুবিও জানিয়েছেন, বিক্ষোভের মতো কিছু আচরণের কারণে ভিসা বাতিল করা হতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রবার্ট গার্সিয়া বলেন, তারা জানতে পেরেছেন, প্রায় ৮০০ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও আঘাত হানা হচ্ছে।

আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু অ্যাক্টিভিস্টদেরই টার্গেট করছে না, বরং সামান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেও ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। এমনকি, কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা না হলেও, ট্রাফিক টিকিট বা অন্য কোনো ঘটনার কারণেও ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।

মামলার আইনজীবীরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের ভিসা অবিলম্বে পুনর্বহাল করা হোক। যাতে করে তারা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বা যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকা এবং কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সামান্য ভুলের কারণেও পড়তে হতে পারে জটিলতায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *