মার্কিন অস্ত্রের জন্য অশনি সংকেত! চীন কি বিরল খনিজ সরবরাহ বন্ধ করতে চলেছে?

চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র শিল্পের জন্য বিরল খনিজ সরবরাহে সংকট?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ তীব্র রূপ নিচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পে। চীনের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু বিরলminerals (খনিজ পদার্থ)-এর রপ্তানির ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ পেতে সমস্যায় পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাপে ফেলতে চাইছে। কারণ, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে সাবমেরিন, ড্রোন—এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও এই বিরল খনিজগুলো অপরিহার্য।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS)-এর মতে, চীনের এই পদক্ষেপ ছিল অনেকটা অনুমেয়, কারণ বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা ছিল।

আসলে, এই বিরল খনিজগুলোর বাজার কার্যত চীনের হাতে। বিশ্বে ব্যবহৃত এই ধরনের খনিজের ৭০ শতাংশই চীন খনন করে এবং ৯০ শতাংশ পরিশোধিত করে।

এই পরিস্থিতিতে চীনের রপ্তানি নীতির পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এই খনিজগুলো সামরিক প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

উদাহরণস্বরূপ, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ভার্জিনিয়া এবং কলাম্বিয়া শ্রেণির সাবমেরিন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ব্যবস্থা, প্রিডেটর ড্রোন এবং স্মার্ট বোমা তৈরিতে এই খনিজগুলো ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে। ইউক্রেন এবং গ্রিনল্যান্ড থেকে খনিজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাঙ্ক, চ্যাথাম হাউসের গবেষক উইলিয়াম ম্যাথিউজ মনে করেন, “চীন এখন সরবরাহ শৃঙ্খলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি অত্যাধুনিক চিপস এবং অন্যান্য প্রযুক্তি থেকে চীনকে দূরে রাখতে চায়, তাহলে চীনও সরবরাহ বন্ধ করে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।”

অন্যদিকে, এই সংকট শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

টেসলার মতো কোম্পানি ইতিমধ্যেই তাদের বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত বিরল খনিজ পদার্থের ব্যবহার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর চেষ্টা করছে।

চ্যাথাম হাউসের আরেক গবেষক প্যাট্রিক শ্রোয়েডার বলেন, “বিষয়টি নতুন নয়, বরং এক দশক ধরে এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেক অত্যাধুনিক শিল্প এই বিরল খনিজগুলো ছাড়া উৎপাদন করতে পারে না।”

তাঁর মতে, “অন্যান্য দেশগুলো চীনের এই দূষণ সৃষ্টিকারী উৎপাদন প্রক্রিয়াকে এতদিন মেনে নিয়েছিল, কারণ বাণিজ্য স্বাভাবিক ছিল এবং ভূ-রাজনৈতিক কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।”

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘকাল ধরে চললে, সামরিক ক্ষেত্রে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষ করে, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির দৌড়ে চীন যদি এগিয়ে যায়, তবে তা সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *