রুমেনিয়ায় ভালুকের সংখ্যা বাড়ছে, নতুন আইন তৈরির পরিকল্পনা।
ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় ভালুকের সংখ্যা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত বাড়ছে। দেশটির বন গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, কার্পেথিয়ান পর্বতমালায় প্রায় ১৩ হাজার বাদামি ভালুক রয়েছে, যা আগে ধারণা করা হতো তার প্রায় দ্বিগুণ।
ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন আইন তৈরির কথা ভাবছে।
গবেষণা বলছে, ভালুকের মল ও চুলের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে, পায়ের ছাপ এবং চোখে দেখা তথ্যের ভিত্তিতে ভালুকের সংখ্যা ৮ হাজারের কম অনুমান করা হয়েছিল।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ভালুকের হামলায় ২৬ জন নিহত এবং ২৭৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে ১৯ বছর বয়সী এক পর্যটকের মৃত্যু হয়, যিনি কার্পেথিয়ান পর্বতের একটি জনপ্রিয় পথে ভ্রমণ করছিলেন।
২০২৩ সালে ভালুক দেখার খবর পাওয়া গিয়েছিল ৭,৫০০ বারের বেশি। এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার গত বছর ভালুক নিধনের অনুমতি দ্বিগুণ করে ৪৮১-এ উন্নীত করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভালুক একটি সংরক্ষিত প্রজাতি।
সাংসদেরা বলছেন, ভালুকের অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। তবে পরিবেশবাদীরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, ভালুককে জনবসতি থেকে দূরে রাখতে এবং সমস্যা সৃষ্টিকারী ভালুক চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি রোমানিয়া ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, ভালুক এখন আবাসিক এলাকা ও সড়কের কাছাকাছি আসছে, যা মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
ভ্রমণকারীদের স্থানীয় সতর্কতা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে তিন বছরে প্রায় ২৪ হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, রোমানিয়ায় ১০,৪১৯ থেকে ১২,৭৭০টি ভালুক রয়েছে। রাশিয়া বাদে ইউরোপে বাদামি ভালুকের এত বড় সংখ্যা আর নেই।
তবে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) রোমানিয়া তাদের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, সাধারণত কম সময়ের জন্য জিনগত গবেষণা করা হয়।
যদিও ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তাদের জরিপ ৯৫ শতাংশ সঠিক।
রোমানিয়ার পরিবেশমন্ত্রী মিরচা ফেকেট বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় কমিশনকে ভালুকের সংরক্ষিত status তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবাসস্থল নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং একেবারে শেষ উপায় হিসেবেই কেবল ভালুক শিকার করা যেতে পারে।
আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালুকের আদর্শ সংখ্যা হওয়া উচিত ৪,০০০।”
তিনি আরও জানান, স্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য এমন একটি আইন আনা হবে, যার মাধ্যমে বর্তমান ‘ধীরে ধীরে হস্তক্ষেপ’-এর পদ্ধতি এড়িয়ে যাওয়া যাবে। বর্তমানে ভালুক দেখা গেলে মেয়রদের প্রথমে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে হয় অথবা ধরে অন্য কোথাও সরিয়ে দিতে হয়।
নতুন আইনে, প্রয়োজন হলে সরাসরি ভালুক নিধনেরও ব্যবস্থা রাখা হবে।
বর্তমান পদ্ধতিগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। আমি আশা করি, আমার প্রস্তাব, যা বর্তমানে জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, তা এই ধরনের ট্র্যাজেডির অবসান ঘটাবে। মানুষের জীবন সবার আগে।”
অন্যদিকে, স্লোভাকিয়াতেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানেও গত মাসে ৩৫০টি ভালুক মারার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর মতে, “এমন একটি দেশে মানুষ বসবাস করতে পারে না, যেখানে তারা বনে যেতে ভয় পায় এবং মানুষ ভালুকের খাদ্য হয়।”
স্লোভাকিয়ায় ভালুকের আক্রমণে গত বছর আরও ২ জন মারা যান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।