ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা! সতর্কবার্তা দিল আন্তর্জাতিক সংস্থা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে চলতি বছরে বিশ্ব বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিকে দুর্বল করে দেবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এই পূর্বাভাস বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।

ডব্লিউটিও’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তারা আগে ধারণা করেছিল এই বছর বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ২.৭% বাড়বে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির কারণে এখন তারা ০.২% পতনের আশঙ্কা করছে।

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, বিশ্ব বাণিজ্য ১.৬% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এমনটা ঘটলে বিশ্ব অর্থনীতির জিডিপি প্রবৃদ্ধিও দুর্বল হয়ে ২.২% থেকে ১.৫%-এ নেমে আসতে পারে।

সংস্থাটির মহাপরিচালক, এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা, বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য “বিচ্ছিন্নতা” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ৮১% থেকে ৯১% পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা দুটি বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে “সম্পূর্ণ বিচ্ছেদের” সমতুল্য এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে সব ধরনের আমদানির ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করেছে। চীনের ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার ১৪৫% পর্যন্ত।

এছাড়া, গাড়ি ও ইস্পাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপরও উচ্চ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মনে করে, এই নীতির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে। তবে অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্য কিছুটা বাড়তে পারে।

যদিও ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি কিছুদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, কিন্তু এর পুনরায় প্রয়োগ হলে তা বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর আরও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

যদি এমনটা হয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যে ০.৮% পর্যন্ত পতন হতে পারে। এছাড়া, বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে, অন্যান্য দেশগুলোও তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে, যা বাণিজ্যে আরও ১.৬% পতন ঘটাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্যে এই ধরনের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট ও কৃষিজাত পণ্যের মতো বিভিন্ন খাতের রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিলে, রপ্তানি কমে যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এছাড়া, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

চীনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে এর প্রভাব তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনের মতে, এই ধরনের শুল্ক বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সমাধান নয়, বরং তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর হবে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের উচিত হবে বিশ্ব বাণিজ্যের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

রপ্তানি বাজারকে বহুমুখী করা, নতুন বাণিজ্য চুক্তি করা এবং বাণিজ্য খরচ কমানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে শুল্কনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্যে এই ধরনের অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের রপ্তানি খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে, নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং বাণিজ্য সহজীকরণের দিকে নজর দিতে হবে।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *