নদীর পানিতে ওষুধের বিষ! উদ্বেগে সালমনের জীবন?

বাংলার নদীগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ঔষধের দূষণ, যার প্রভাব পড়ছে জলজ প্রাণীকুলের ওপর। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, মানুষের ব্যবহৃত কিছু ঔষধ, বিশেষ করে উদ্বেগ কমানোর ওষুধ (antianxiety drugs) সরাসরি মাছের আচরণে পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তনের ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় দেখা দিচ্ছে মারাত্মক হুমকি।

গবেষণাটি মূলত সুইডেনের একটি নদীতে চালানো হয়, যেখানে বিজ্ঞানীরা ‘ক্লোবাজাম’ (clobazam) নামক একটি ওষুধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। ক্লোবাজাম হলো এক ধরনের বেনজোডায়াজেপিন (benzodiazepine) জাতীয় ওষুধ, যা মানুষের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি যখন নদীর পানিতে মিশে, তখন তা মাছের শরীরে প্রবেশ করে এবং তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরিবর্তন করে দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লোবাজামের প্রভাবে মাছেরা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতিতে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে এবং নদীর বাঁধগুলো সহজে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। প্রথম দর্শনে এটি মাছের জন্য উপকারী মনে হতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি উদ্বেগের কারণ। কারণ, কোনো প্রাণীর স্বাভাবিক আচরণে মানুষের হস্তক্ষেপ, বিশেষ করে মনো-সক্রিয় (psychoactive) পদার্থের কারণে পরিবর্তন আসলে তা বিপদজনক।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ইদাহোর অধ্যাপক ক্রিস্টোফার সি. কডিল (Christopher C. Caudill) বলেন, “মাছ এবং মানুষের শারীরবৃত্তীয় গঠন অনেক অংশে একই রকম। তাই, মানুষের স্নায়ু-প্রভাবকারী ওষুধ যে মাছের আচরণেও পরিবর্তন আনবে, এটা খুবই স্বাভাবিক।”

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৭০০-এর বেশি তরুণ স্যামন মাছ (young salmon) নিয়ে কাজ করেন। এদের শরীরে শব্দ-তরঙ্গ প্রেরণকারী ট্যাগ (sound-transmitting tags) বসিয়ে নদীর গভীরে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা ক্লোবাজাম এবং ট্রামাদল (tramadol) নামক দুটি ওষুধ মাছের শরীরে প্রবেশ করিয়ে তাদের আচরণ পরীক্ষা করেন। ট্রামাদল হলো এক প্রকারের ব্যথানাশক ওষুধ। এই দুটি ওষুধ একসাথে প্রয়োগ করলে মানুষের শরীরেও বিক্রিয়া হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, যে স্যামন মাছগুলোর শরীরে ক্লোবাজাম ছিল, তারা অন্যদের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাল্টিক সাগরে পৌঁছেছিল। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো অজানা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লোবাজামের কারণে মাছের মধ্যে ভয়ের অনুভূতি কমে যায়, ফলে তারা দ্রুত পথ অতিক্রম করতে পারলেও, সাগরে তাদের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মার্কাস মিশেলানগেলি (Dr. Marcus Michelangeli) বলেন, “বেশি সংখ্যক ওষুধ-যুক্ত মাছ হয়তো সাগরে পৌঁছাচ্ছে, তবে এর মানে এই নয় যে তারা সুস্থ আছে বা তাদের প্রজাতি উপকৃত হচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এই গবেষণাটি সুইডেনের স্যামন মাছের ওপর করা হয়েছে, তবে এটি বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশের নদ-নদীগুলোতেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধের দূষণ বাড়ছে। এই দূষণ যদি জলজ প্রাণীর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে, তাহলে তা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে। এখনই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *