ট্রাম্পের পরিকল্পনা: মার্কিন অপরাধীদের এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর পথে আইনি জটিলতা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বিশেষ করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের এল সালভাদরের কারাগারে পাঠানোর কথা ভাবছেন। গত মাসে তিনি ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাং-এর ২৩৮ জন সদস্য এবং এল সালভাদরের এমএস-১৩ গ্যাং-এর ২৩ জন সদস্যকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
এবার তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের সেখানে পাঠানোর কথা বলছেন। তবে, এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হতে পারে, কারণ এতে রয়েছে বহু আইনি চ্যালেঞ্জ।
এই পরিকল্পনার প্রধান কারণ হলো, ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় বসবাসকারী ভয়ঙ্কর অপরাধীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা উচিত। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে-র সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বুকেলে এক্ষেত্রে তার সমর্থন দিতে রাজি হয়েছেন। তবে, ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, আইনসম্মত না হলে তিনি এই পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, মার্কিন নাগরিকদের অন্য দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভবত বেআইনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো নাগরিককে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায় না।
এছাড়া, ট্রাম্প নিজেই তার আগের মেয়াদে এমন একটি বিল স্বাক্ষর করেছিলেন, যা এই ধরনের পদক্ষেপকে আরও কঠিন করে তোলে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সরকারকে প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা) দিতে রাজি হয়েছে। এল সালভাদরে সন্ত্রাসীদের জন্য নির্মিত একটি বিশেষ কারাগারে তাদের রাখা হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অন্য দেশে বন্দী করা অসাংবিধানিক। এছাড়াও, তারা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন কিলমার আরমান্দো অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ২৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠিয়েছিল, যিনি ১৪ বছর ধরে মেরিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন এবং একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন।
যদিও অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাং-এর সদস্য ছিলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।
আইনজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প যদি সত্যিই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন হবে। কারণ, কোনো আদালত যদি এই ধরনের পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে তা কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা