আতঙ্কের সৃষ্টি! ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ার কঠিন পদক্ষেপ!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে ক্যালিফোর্নিয়া। অঙ্গরাজ্যটি অভিযোগ করেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ছিল বেআইনি, যা তাদের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা এই মামলাটি করেছেন।

মামলার মূল বক্তব্য হলো, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act of 1977 বা IEEPA)-এর অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার পক্ষ থেকে এটিকে আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা আদালতের কাছে ট্রাম্পের শুল্ক সংক্রান্ত নির্দেশকে ‘অবৈধ ও বাতিল’ ঘোষণার আবেদন করেছেন।

গভর্নর নিউসম এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ট্রাম্পের বেআইনি শুল্ক ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবার, ব্যবসা এবং অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যা মূল্যবৃদ্ধি করছে এবং কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলছে।” ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির পঞ্চম বৃহত্তম এবং তারা বাণিজ্য ক্ষেত্রে মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল।

এই শুল্কের কারণে রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, এর মাধ্যমে ‘ন্যায্য বাণিজ্য’ নিশ্চিত করা, মার্কিন শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘শিল্প-শক্তিধর’ রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব হবে। তিনি একবার প্রায় সকল আমদানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন এবং পরে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।

তবে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে। এছাড়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।

ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম আমদানিকারক এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক রাজ্য। এই রাজ্যের কৃষকরা, বিশেষ করে সেন্ট্রাল ভ্যালির কৃষকরা, শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কৃষি পণ্য রপ্তানিকারক, যারা বাদাম, টমেটো, ওয়াইন এবং চালসহ বিভিন্ন পণ্য বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করে। ২০২২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ক্যালিফোর্নিয়া আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের শুল্কের প্রভাব থেকে বাঁচানো যায়। ইতোমধ্যেই, একটি আইনি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবসার পক্ষ থেকে একই ধরনের একটি মামলা করেছে, যারা শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্কের পরিবর্তন, বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।

ক্যালিফোর্নিয়ার এই আইনি পদক্ষেপ বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির উপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *