পাকিস্তানের প্রবাসী ভোটারদের মন জয় করতে চাইছে বর্তমান সরকার। সম্প্রতি ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ব্যাপারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। মূলত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কমানোর লক্ষ্য নিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, প্রবাসীদের জন্য বিশেষ আদালত স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংরক্ষণ, বিমানবন্দরে দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং কর সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের বাইরে বসবাস করা প্রায় এক কোটি পাকিস্তানি নাগরিক দেশটির অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স পাকিস্তানের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
শাহবাজ শরিফ এই প্রবাসীদের ‘জাতির গর্ব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অবদানের প্রশংসা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিদেশে বসবাস করা পাকিস্তানি নাগরিকদের মধ্যে ইমরান খানের প্রভাব হ্রাস করা। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে ইমরান খানের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
ধারণা করা হয়, এই প্রবাসীরা বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে ইমরান খানের পক্ষে লবিং করেন, যা ইসলামাবাদের ওপর প্রভাব ফেলে।
ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই তার দল পিটিআইয়ের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। এমনকি, গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, সরকারের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার চাইছে প্রবাসীদের সমর্থন আদায় করে ইমরান খানের একচেটিয়া প্রভাব খর্ব করতে।
তবে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কতটা কমছে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। যদিও তিনি প্রবাসীদের টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বলেছিলেন, তারপরও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি বছর পাকিস্তানে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, শুধু মার্চ মাসেই প্রবাসীরা ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন, যা একটি রেকর্ড।
সরকার প্রবাসীদের বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছে, কারণ তারা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজে প্রবাসীদের বিনিয়োগ তত্ত্বাবধান করবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে, অনেকে মনে করেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা কতটা আস্থা রাখতে পারবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির অবশ্য ‘ব্রেইন ড্রেন’ নিয়ে উদ্বেগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি একে ‘ব্রেইন গেইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা