ট্রাম্পের প্রিয় যুদ্ধগুলোই তার প্রেসিডেন্ট পদের আসল রহস্য!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের কৌশল: বিতর্কের আগুনে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিভিন্ন বিতর্ককে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন, তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ক্ষমতা আকড়ে রাখতে তিনি প্রায়ই এমন কিছু বিষয় সামনে আনেন, যা তার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।

সম্প্রতি অভিবাসন নীতি, ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদ এবং নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে তার পদক্ষেপগুলো তারই প্রমাণ।

ট্রাম্পের এই কৌশল আসলে কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল লক্ষ্য হলো তার সমর্থকগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং তাদের মধ্যে তার ভাবমূর্তি অটুট রাখা। একইসঙ্গে, তার বিরোধীদের দুর্বল করে দেওয়াও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

বিতর্ক তৈরির মাধ্যমে তিনি মূল সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ ঘোরাতে চান, যেমনটা তার প্রথম মেয়াদে প্রায়ই দেখা গেছে।

উদাহরণ হিসেবে, সম্প্রতি অভিবাসন নিয়ে তার কঠোর পদক্ষেপের কথা বলা যায়। একজন অনিবন্ধিত অভিবাসী, কিলমার আরমান্দো অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ছিল বেশ আক্রমণাত্মক।

গার্সিয়াকে তার নিজ দেশ এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তারা প্রথমে একটি ভুল স্বীকার করে, কিন্তু পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। মূলত, ট্রাম্পের দল এই ইস্যুকে ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে।

অভিবাসন ট্রাম্পের জন্য বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে তিনি মেক্সিকান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন।

এবারও তিনি বিদেশি নাগরিকদের “অনুপ্রবেশ” এবং বাইডেন প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করে বক্তব্য রেখেছেন। সিএনএন/এসএসআরএস-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্পের প্রতি ৫১ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে।

ট্রাম্পের এই কৌশল শুধু রাজনৈতিক ফায়দার জন্য নয়, এর পেছনে একটি গভীর আদর্শিক ভিত্তিও রয়েছে। তিনি চান উদারনৈতিক শক্তিগুলোকে দুর্বল করতে, নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে এবং অভিবাসন নীতির মাধ্যমে ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনকে রুখতে।

ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের বিষয়টিতেও ট্রাম্পের একই কৌশল দেখা যায়। তিনি মেয়েদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে একটি বিতর্ক তৈরি করেছেন। এই ইস্যুতে তিনি রক্ষণশীল এবং ধর্মভীরু ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন, এমনকি কিছু মধ্যপন্থী ভোটারেরও সমর্থন পেতে চাইছেন।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো একদিকে যেমন তার সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ যোগায়, তেমনি সমালোচকদের মনে ভীতিও সৃষ্টি করে। অনেকে মনে করেন, একজন প্রেসিডেন্টের এমন ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত নয়, যা ব্যক্তিগত অধিকারের পরিপন্থী।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আক্রমণও তার এই কৌশলের অংশ। তিনি মনে করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রগতিশীল আদর্শে প্রভাবিত এবং তার বিরোধীদের আশ্রয়স্থল। এমন অভিযোগ তুলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন, যা অনেকের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের সন্দেহ জাগিয়েছে।

ট্রাম্পের এই বিতর্কগুলো একদিকে যেমন তার রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে সহায়তা করে, তেমনি দেশের মধ্যে বিভেদও বাড়ায়। সমালোচকরা মনে করেন, এই ধরনের কৌশল দেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না এবং এর মাধ্যমে কর্তৃত্বপরায়ণতার ঝুঁকি তৈরি হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *