মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে বাংলাদেশে, সেই সঙ্গে মানুষজন বিকল্প পথ খুঁজছেন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রোবায়োটিক-এর (Probiotic) ভূমিকা নিয়ে নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা আমাদের মনে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোবায়োটিক গ্রহণ করলে মন খারাপের (negative mood) অনুভূতি কমে আসে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি গত ৯ই এপ্রিল ‘এনপিজেড মেন্টাল হেলথ রিসার্চ’ (npj Mental Health Research) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করা, এমন ৮৮ জন ব্যক্তির ওপর প্রোবায়োটিকের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের গড় বয়স ছিল ২২ বছর।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দৈনন্দিন মন ভালো থাকার বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একটি দলকে ২৯ দিন ধরে প্রোবায়োটিক-যুক্ত একটি মিশ্রণ খেতে দেওয়া হয়। এই মিশ্রণে ছিল নয় ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া (Bifidobacterium, Lactobacillus, এবং Lactococcus)।
অন্য একটি দলকে দেওয়া হয়েছিল একটি প্ল্যাসিবো (placebo)। এই দুই দলের মধ্যে তুলনা করে গবেষকরা প্রোবায়োটিকের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষণার ফলাফল বলছে, প্রোবায়োটিক গ্রহণকারীরা দুই সপ্তাহ পর থেকেই তাঁদের মন খারাপের অনুভূতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন, যা প্ল্যাসিবো গ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা যায়নি।
গবেষণাটির প্রধান লেখক, ড. ক্যাটেরিনা জনসন জানান, “প্রতিদিনের মন ভালো থাকার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখার কারণে প্রোবায়োটিকের প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে।
মনোবৈজ্ঞানিক কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে মানুষের মানসিক অবস্থা পরিমাপ করার প্রচলিত পদ্ধতিগুলোতে অনেক সময় সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো ধরা নাও পড়তে পারে। কিন্তু প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণে তা স্পষ্ট হয়।”
আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে অন্ত্রের (gut) একটি বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে, যা ‘গাট-ব্রেইন কানেকশন’ নামে পরিচিত।
অন্ত্রে উৎপন্ন হওয়া সেরোটোনিন (serotonin) নামক একটি রাসায়নিক উপাদান আমাদের মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে, এই গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোবায়োটিক মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি কোনো চিকিৎসা বা ঔষধের বিকল্প নয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ইউনিভার্সিটি অফ নেভাডা, লাস ভেগাসের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. লিসা ডুরেট বলেছেন, “মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসায় প্রোবায়োটিক একটি সহায়ক হতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।”
যদি এই গবেষণা প্রমাণ করতে পারে যে প্রোবায়োটিক একইসঙ্গে মন খারাপের অনুভূতি কমায়, আবার ভালো অনুভূতিগুলোও বজায় রাখতে সাহায্য করে, তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক-যুক্ত খাবার যোগ করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
কারণ, সবার শরীর ও মানসিক অবস্থা একরকম নয়।
সতর্কতা: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য। কোনো চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন (Healthline)