আশ্চর্য! পতিতা ছিলেন না মেরি ম্যাগডালিন? আসল পরিচয় কি?

মারিয়া মгдаলীন: এক নারীর ভুল ইতিহাস ও আসল পরিচয়

প্রাচীন ইতিহাসে এমন অনেক চরিত্র আছেন যাদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলো সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের কারণ হলো নতুন আবিষ্কার, ঐতিহাসিক গবেষণা এবং পুরোনো তথ্যের পুনর্বিবেচনা।

এমনই একজন নারী হলেন মারিয়া মгдаলীন, যিনি বাইবেলে যিশুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি ছিলেন একজন পতিতা। কিন্তু ঐতিহাসিক প্রমাণ বলছে, এই ধারণা সম্ভবত সঠিক নয়।

বরং, তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী, যিনি যিশুর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

গ্যালিলির মгдаলা নামক একটি শহরে মারিয়ার বাস ছিল। সেই সময় মгдаলা শহরটি মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত ছিল।

সম্ভবত মারিয়া সেই অঞ্চলের একজন ধনী পরিবারের সদস্য ছিলেন। কারণ, তৎকালীন সমাজে নারীদের স্বাধীনতা সীমিত ছিল।

একজন অবিবাহিত নারী পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। কিন্তু বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী, মারিয়া যিশুর সঙ্গে অবাধে ঘুরে বেড়াতেন।

তিনি যিশুর শিক্ষা অনুসরণ করতেন এবং তাঁর অনুসারীদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।

বাইবেলে আছে, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময় যখন তাঁর সকল শিষ্য ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তখন মারিয়া এবং আরও কয়েকজন নারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এই ঘটনা মারিয়ার সাহসিকতা ও আনুগত্যের প্রমাণ দেয়।

গসপেলগুলোতে মারিয়া মгдаলীন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে কিছু সূত্রে জানা যায়, তিনি যিশুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

যেমন, ‘গসপেল অফ ফিলিপ’ নামক একটি গ্রন্থে উল্লেখ আছে, মারিয়া ছিলেন যিশুর ‘সঙ্গী’। যদিও এর অর্থ সবসময় প্রেমের সম্পর্ক নাও হতে পারে।

সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে, একজন নারীর সম্মান ও অবস্থান তাঁর পরিবারের উপর নির্ভরশীল ছিল। মারিয়ার এই স্বাধীনতা সম্ভবত তাঁর আর্থিক স্বচ্ছলতার কারণেই এসেছিল।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মারিয়ার আসল পরিচয় জানার জন্য গnostic খ্রিস্টানদের লেখাগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এই লেখকদের মতে, মারিয়ার আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছিল অসাধারণ।

যিশুর মৃত্যুর পর তিনিই তাঁর শিক্ষা প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তবে, সময়ের সাথে সাথে চার্চের কিছু অংশে মারিয়াকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাঁকে ‘পাপী নারী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়।

এমনকি ষষ্ঠ শতকে পোপ গ্রেগরি ১ ঘোষণা করেন যে, মারিয়া ‘পাপের পথে’ ছিলেন। এই ভুল ধারণা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে এসেছে।

১৯৬৯ সালে পোপ ষষ্ঠ পল মারিয়ার এই ভুল পরিচয় থেকে মুক্তি দেন এবং তাঁর আসল সম্মানের স্থান ফিরিয়ে দেন।

মারিয়া মгдаলীন-এর জীবন আজও রহস্যে ঘেরা। তবে ঐতিহাসিক গবেষণা ও নতুন তথ্যের মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের ফলে আমরা একজন প্রভাবশালী, সাহসী এবং যিশুর অনুগত শিষ্যাকে নতুনভাবে চিনতে পারছি।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *