প্রাচীন মিথ থেকে আধুনিক সাহিত্য—ড্রাগনের বিবর্তন
ড্রাগন—এক ভয়ঙ্কর রূপকথা চরিত্র, যা যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্পনার জগতে রাজত্ব করেছে। বিশাল শরীর, আগুনের হলকা, আর ভয়ঙ্কর ক্ষমতা—এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে ড্রাগন সব সংস্কৃতিতেই এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনে ড্রাগনের এই বিবর্তন এবং আধুনিক বিশ্বে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাচীন গ্রিসে ড্রাকন (drakon) ছিল এক শক্তিশালী প্রাণী। তারা গুহায় গুপ্তধন আগলে রাখত, আর বীর যোদ্ধারা তাদের বধ করে খ্যাতি অর্জন করত।
মেসোপটেমীয় সভ্যতা থেকে চীন পর্যন্ত, ড্রাগন বিভিন্ন রূপে মানুষের কল্পনায় স্থান করে নিয়েছে। কোনো সংস্কৃতিতে তারা ধ্বংসের প্রতীক, আবার কোনো সংস্কৃতিতে সৌভাগ্যের দূত।
ইউরোপে ড্রাগন ছিল এক ভীতিকর প্রতিপক্ষ, যাকে পরাজিত করা বীরত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ ছিল। মধ্যযুগের বীরত্বগাথা এবং সাধুদের জীবনীতে ড্রাগন বধের গল্প প্রায়ই শোনা যায়।
তবে ড্রাগনের এই ভয়ঙ্কর রূপ সবসময় একই রকম ছিল না। সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে আধুনিক সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে, ড্রাগন আরও মানবিক হয়ে উঠেছে। তারা এখন আর শুধু ভিলেন নয়, বরং বন্ধু এবং সহযোগী হিসেবেও আবির্ভূত হচ্ছে।
জে. আর. আর. টলকিনের ‘দ্য হবিট’-এর স্মাগ (Smaug) ছিল এক ভয়ঙ্কর ড্রাগন, যে কিনা একাই একটি রাজ্যের ধ্বংস ডেকে এনেছিল।
টলকিন ড্রাগনকে উপস্থাপন করেছেন এক জটিল চরিত্রে, যা পাঠকের মনে ভীতি ও আগ্রহ দুটোই জাগিয়ে তোলে। টলকিনের হাত ধরে ড্রাগন চরিত্রটি নতুন এক মাত্রা পায়, যা পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের প্রভাবিত করেছে।
তবে ড্রাগনের এই বিবর্তনে পরিবর্তন আসে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে। নারীবাদী ও প্রতি-সংস্কৃতি আন্দোলনের প্রভাবে ড্রাগন আর শুধু খলনায়ক থাকেনি।
অ্যান ম্যাককাফ্রের (Anne McCaffrey) ‘ড্রাগনফ্লাইট’-এর মতো লেখকরা ড্রাগনকে বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে তারা মানুষের সহযোগী এবং যোদ্ধা। জর্জ আর. আর. মার্টিনের (George R. R. Martin) ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর ডেনেরিস টার্গেরিয়ানের ড্রাগনও ছিল এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
রেবেকা ইয়ারোসের ‘এমপায়রিন’ সিরিজেও ড্রাগন ও মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আসলে, ড্রাগনের এই আকর্ষণ আজও বিদ্যমান। তারা একদিকে যেমন প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক শক্তির প্রতীক, তেমনই তারা মানুষের সাহসিকতা ও বীরত্বেরও প্রতীক।
আধুনিক বিশ্বে যখন অস্থিরতা বাড়ছে, তখন ড্রাগনের গল্পগুলো যেন আমাদের বাস্তব জীবনের কঠিন পরিস্থিতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। ড্রাগন হয়তো সবসময় আমাদের বন্ধু হবে না, কিন্তু তাদের গল্পগুলো আমাদের কল্পনাকে আরও সমৃদ্ধ করে, যা আমাদের সংস্কৃতিতে এক বিশেষ স্থান ধরে রেখেছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক