অবাক করা খবর! ফ্লোরিডার জাতীয় উদ্যানে কন্টেইনারে তৈরি হোটেল!

**ফ্লোরিডার এভারগ্লেড্‌স ন্যাশনাল পার্কে কন্টেইনারে তৈরি হোটেল: প্রকৃতির মাঝে আরামের ঠিকানা**

ফ্লোরিডার বিশাল এভারগ্লেড্‌স ন্যাশনাল পার্ক, যা প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি, সেখানে ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন এক আকর্ষণ হতে চলেছে—ফ্লেমিঙ্গো লজ। এই লজটি তৈরি হয়েছে শিপিং কন্টেইনার দিয়ে, যা পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের এক দারুণ উদাহরণ।

যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, কিন্তু একইসঙ্গে আরামদায়ক একটি আবাসস্থল চান, তাদের জন্য এই লজটি একটি আদর্শ জায়গা হতে পারে।

এভারগ্লেড্‌স ন্যাশনাল পার্কটি প্রায় ১৫ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এটি আমেরিকার বৃহত্তম উপক্রান্তীয় বন্য এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আগে এখানে রাতে থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

পর্যটকদের জন্য একমাত্র উপায় ছিল হয় তাঁবুতে অথবা আরভি-তে (RV) রাত কাটানো। কিন্তু সম্প্রতি, এখানে ফ্লেমিঙ্গো লজ পুনরায় চালু হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

হোটেলটি মূলত ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস এবং ফ্লেমিঙ্গো অ্যাডভেঞ্চারস-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। এখানে আছে ২৪টি কক্ষ, যেগুলো তৈরি করা হয়েছে মজবুত স্টিলের শিপিং কন্টেইনার দিয়ে।

এই কন্টেইনারগুলো ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। প্রত্যেকটি কক্ষে রয়েছে আধুনিক সব সুবিধা—রান্নাঘর, আরামদায়ক সোফা এবং কাঠের মেঝে।

এখানকার সাজসজ্জায় স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রকৃতির একটি ছোঁয়া রয়েছে, যা এই লজটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ফ্লেমিঙ্গো লজের জেনারেল ম্যানেজার জে জে কন্ডেলা জানিয়েছেন, “এভারগ্লেড্‌স ন্যাশনাল পার্কের ফ্লেমিঙ্গো এলাকাটি বহু বছর ধরেই পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় গন্তব্য।

নতুন এই লজটি উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা তাদের জন্য আরও উন্নত থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি।”

এখানে থাকার পাশাপাশি, পর্যটকেরা বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন। কায়াকিং, বোট রাইড, এবং হাইকিং-এর মতো আকর্ষণীয় কার্যকলাপের সুযোগ রয়েছে।

বোট রাইডে গেলে বন্যপ্রাণী, যেমন—ডলফিন ও ম্যানাটি-দের দেখা যায়, যা ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। এছাড়া, এখানকার রেস্তোরাঁটিতে ফ্লোরিডার স্থানীয় স্বাদের খাবার পাওয়া যায়।

স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদ, যেমন—নারকেল চিংড়ি, ক্রিস্পি এম্পানাডা, এবং সুস্বাদু কনক চাউডার স্যুপ এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। লজে সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানকার কক্ষগুলোতে পরিবেশ-বান্ধব সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী, তাদের জন্য এখানে বিশেষ কক্ষের ব্যবস্থা আছে, যেখানে সহজে প্রবেশ করা যায়।

ফ্লেমিঙ্গো লজটি মায়ামি শহর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। এখানে যেতে হলে গাড়ির প্রয়োজন হবে, কারণ পার্কের ভেতরে গণপরিবহন বা শাটল-এর ব্যবস্থা নেই।

তবে, লজের আশেপাশে রেস্তোরাঁ, দর্শনার্থীদের কেন্দ্র এবং মেরিনা—সবকিছু পায়ে হেঁটে যাওয়ার দূরত্বে অবস্থিত।

বর্তমানে, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই লজের ঘর ভাড়া শুরু হয় ১৫৯ ডলার (প্রায় ১৭,৫০০ টাকা) থেকে, যা নভেম্বরের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত ২৫৯ ডলারে (প্রায় ২৮,৫০০ টাকা) গিয়ে দাঁড়ায়।

এখানে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। এভারগ্লেড্‌স ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করার জন্য পার্কের প্রবেশ ফি দিতে হয়।

প্রকৃতির কাছাকাছি, আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য ফ্লেমিঙ্গো লজ একটি দারুণ ঠিকানা। যারা প্রকৃতির মাঝে শান্ত ও সুন্দর একটি ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য এই লজটি একটি আদর্শ জায়গা।

তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *