মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির জেরে কাশ্মীরি কার্পেট শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আমদানি শুল্কের বোঝা চাপায় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত।
কাশ্মীর উপত্যকার কার্পেট শিল্প सदियों ধরে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে, যা কাশ্মীরি সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই শিল্পের সাথে জড়িত হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকার কার্পেটগুলি সাধারণত রেশম ও উলের মতো মূল্যবান উপকরণ দিয়ে হাতে তৈরি করা হয়। প্রতিটি কার্পেট বুনতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যায়, যা এই শিল্পের কারিগরদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার প্রমাণ।
এই শিল্প মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির কারণে এই কার্পেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমতে শুরু করেছে।
শ্রীনগরের মোহাম্মদ ইউসুফ দার এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা, তাঁদের কুটির শিল্পে কার্পেট বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মতো হাজারো শিল্পী এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
তাঁরা জানান, আগে যেখানে একশো জনের বেশি কারিগর এই কাজ করতেন, সেখানে এখন হাতে গোনা কয়েকজন কাজ করেন। তাঁরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “একটি কার্পেট বুনতে আমাদের মাস যায়, কিন্তু চাহিদা না থাকলে আমাদের দক্ষতা মূল্যহীন হয়ে যায়।”
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই কার্পেটের উপর ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, ফলে ক্রেতাদের জন্য এই কার্পেটের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কাশ্মীরি কার্পেটের চাহিদা কমতে পারে, যা কারিগরদের আয় কমিয়ে দেবে এবং তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলবে। অনেক ক্ষেত্রে, ক্রেতারা তখন সস্তা, যন্ত্রচালিত কার্পেটের দিকে ঝুঁকতে পারে।
কাশ্মীরি কার্পেট সরবরাহকারী উইলায়াত আলী জানান, তাঁর একজন ব্যবসায়ী অংশীদার, যিনি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্সে কার্পেট রপ্তানি করেন, ইতিমধ্যে এক ডজনের বেশি অর্ডার বাতিল করেছেন।
তাঁর কথায়, “এখানে লাভ-ক্ষতির হিসাবটাই আসল। তাঁরা (আমেরিকার ব্যবসায়ী) মাসের পর মাস ধরে তৈরি হওয়া একটি কার্পেটের বুননশৈলী দেখতে পান না।”
এই পরিস্থিতিতে, কাশ্মীরি কার্পেট শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিগুলি ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলিকে রক্ষা করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়, তবে কাশ্মীরি কার্পেট বুননের ঐতিহ্য ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
যেমন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্পের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন, যাতে এই ধরনের কুটির শিল্পগুলি টিকে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা