ড্যানিউব নদী: কিভাবে ঘুরে দেখবেন? অজানা তথ্য!

দানিয়ুব নদী: ইউরোপ ভ্রমণে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

ইউরোপের অন্যতম দীর্ঘ এবং ঐতিহাসিক নদী হল দানিয়ুব। জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে শুরু করে প্রায় ১,৮০০ মাইল পথ অতিক্রম করে এটি রোমানিয়ার কৃষ্ণ সাগরে গিয়ে মিশেছে। এই নদীপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হতে পারে অসাধারণ, যা একইসঙ্গে শিক্ষামূলক এবং আনন্দদায়ক।

যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের জন্য দানিয়ুব নদী একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।

দানিয়ুব নদীপথে ভ্রমণের প্রধান উপায়গুলো হলো নৌবিহার, সাইকেল চালানো এবং পায়ে হেঁটে ভ্রমণ। নৌবিহার বা ক্রুজের মাধ্যমে ভ্রমণের সুযোগ থাকলে, আপনি অল্প সময়ে অনেক স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

রুমানিয়ার দানিয়ুব বদ্বীপ অঞ্চলে ভ্রমণের সুযোগও এখানে রয়েছে, যা অনেক পর্যটকের কাছে এখনো অজানা।

যারা একটু ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা চান, তারা পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়েও দানিয়ুব পথ পাড়ি দিতে পারেন। বিশেষ করে সাইকেল চালকদের জন্য এখানে সুপরিকল্পিত পথ রয়েছে, যা ‘দানিয়ুব সাইকেল পথ’ নামে পরিচিত। এই পথে সাইকেল চালিয়ে পুরো নদীপথ পাড়ি দিতে সাধারণত এক মাস থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।

সাইকেল পথের প্রথম অংশটি তুলনামূলকভাবে সহজ, যা ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে বুদাপেস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে ভালোভাবে সাইনপোস্ট এবং ভাড়ায় সাইকেল পাওয়ারও সুবিধা রয়েছে। এই পথে প্রতিদিন সাইকেলের ভাড়া প্রায় ১,৭০০ থেকে ৩,৫০০ টাকার মতো।

দ্বিতীয় অংশে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম, তাই এই পথটি কিছুটা কঠিন।

পরিবার নিয়ে যারা ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য দানিয়ুব সাইকেল পথ একটি চমৎকার বিকল্প। বিশেষ করে উপরের দিকের পথ, অর্থাৎ ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে বুদাপেস্ট পর্যন্ত পথটি পরিবারের জন্য খুবই উপযোগী।

এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর মাসের শুরু পর্যন্ত ‘হুকড অন সাইক্লিং’ নামক একটি সংস্থা পরিবার-বান্ধব ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে। এই প্যাকেজের আওতায় সাধারণত আট রাতের জন্য থাকার ব্যবস্থা, সকালের নাস্তা এবং লাগেজ স্থানান্তরের ব্যবস্থা থাকে, যা জনপ্রতি প্রায় ৬৪,০০০ টাকার মতো।

তবে, এই খরচের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের খরচ অন্তর্ভুক্ত নয়।

দানিয়ুব নদী ১০টি দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য এবং শেনজেন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা তুলনামূলকভাবে সহজ।

তবে, ইইউ’র বাইরের কোনো দেশে যেতে হলে সীমান্ত পার হতে হয়, যার জন্য পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হয়।

ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরিতে ইংরেজি ভাষায় গাইড এবং অন্যান্য তথ্য পাওয়া সহজ। তবে, পূর্ব দিকে গেলে ইংরেজি জানা মানুষের সংখ্যা কমে যায়।

সেক্ষেত্রে স্থানীয় গাইড বা ট্যুর অপারেটরের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে ইউক্রেন এবং ইউক্রেন সীমান্তের কাছে মলডোভার কিছু অংশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভ্রমণের আগে অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শগুলো দেখে নেওয়া উচিত।

দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত বিভিন্ন শহর, যেমন – ভিয়েনা, বুদাপেস্ট, এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। যারা নতুন কিছু দেখতে ও জানতে চান, তাদের জন্য দানিয়ুব নদী হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *