গাজায় উদ্ধারকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্তে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। মার্চ মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জন উদ্ধারকর্মীর ময়নাতদন্ত করা হয়।
এই ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে, তাঁদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে মাথা ও বুকে সরাসরি গুলির আঘাত এবং বিস্ফোরকের কারণে।
ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ড. আহমেদ ধাইর এই ময়নাতদন্তের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, নিহতদের শরীরে বুলেটের আঘাত এবং বিস্ফোরক থেকে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে।
তাঁর মতে, আঘাতগুলো মূলত বুক, পেট, পিঠ এবং মাথায় ছিল। নিহতদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে সরাসরি গুলির আঘাতে।
এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ‘এক্সপ্লোসিভ বুলেট’ বা ‘বাটারফ্লাই বুলেট’-এর ব্যবহার দেখা গেছে, যা শরীরে বিদ্ধ হওয়ার পর বিস্ফোরিত হয়ে মাংস ও হাড় ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
ড. ধাইর আরও জানান, “আমরা বিস্ফোরক বুলেটের ধ্বংসাবশেষ পেয়েছি। একটি ঘটনায়, বুলেটের মাথা বুকে বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং বাকি অংশ শরীরের ভেতরে পাওয়া গেছে।
এছাড়া, এক ভিকটিমের পিঠেও গুলির স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে।”
ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জাতিসঙ্ঘ (UN) জানায়, উদ্ধারকর্মীদের ‘এক এক করে’ হত্যা করা হয়েছে।
যদিও ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে ঘটনার দায় স্বীকার করতে রাজি হয়নি, পরে তারা তাদের আগের বক্তব্য পরিবর্তন করে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নিহত কর্মীদের মধ্যে ছয়জন হামাস সদস্য ছিল, যদিও ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই ঘটনার পর গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। খাদ্য, জ্বালানি, জল এবং ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
দেশটির মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর নিহত হয়েছে ১,৬০০ জনের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেখানকার হাসপাতালগুলোতেও হামলা চালানো হচ্ছে।
বর্তমানে গাজায় ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদেরকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস আটক করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান