ভুতুড়ে ছায়া আর রোমানদের সাথে: এক ঐতিহাসিক পথে হাঁটা!

প্রাচীন এক সড়কের পথে: রোমানদের স্মৃতি আর এক অচেনা সঙ্গীর পদচিহ্ন।

ইংল্যান্ডের বুকে বয়ে চলা এক প্রাচীন সড়কের গল্প। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সেই পথ, যা এক সময় উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল।

এই সড়কের নাম গ্রেট নর্থ রোড। ওয়াটার নিউটন থেকে স্ট্যামফোর্ড পর্যন্ত এর একটি অংশে হেঁটেছিলেন এক লেখক। সেই যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই প্রতিবেদন।

পথ চলতে চলতে লেখকের মনে হয়েছিল, কেউ যেন তাদের অনুসরণ করছে। কিছুটা দূরে, কিন্তু সবসময় দৃষ্টির সীমানায়।

যখন তারা থামেন, সেই অদৃশ্য সঙ্গীরও যেনoঅবসান হয়। আবার পথ চলতে শুরু করলে, সে ফিরে আসে। এক রহস্যময় উপস্থিতি, যেন তাদের ছায়া।

এই রাস্তা, যা এককালে ব্যস্ত জনপদ ছিল, আজও তার শরীরে বহন করে চলেছে ইতিহাসের নানা স্তর। প্রাচীন পথ, রোমান সড়ক, মধ্যযুগীয় পথ, তীর্থযাত্রীদের রাস্তা, ঘোড়ার গাড়ির পথ—সবকিছু মিলেমিশে একাকার।

আজকের আধুনিক যুগে, এ১ নামের একটি সড়ক তৈরি হয়েছে, যা এই পুরাতন পথটিকে অনেক জায়গায় এড়িয়ে গেছে।

গ্রেট নর্থ রোডের প্রতি লেখকের আগ্রহ তৈরি হয় বহু বছর আগে, যখন তিনি উত্তর ইয়র্কশায়ারে এ১ সড়কের পাশে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের সাথে যুক্ত ছিলেন।

সেখানে তিনি প্রায় আঠারোশো বছর আগের এক মানুষের কঙ্কাল আবিষ্কার করেন। সেই মুহূর্তেই তিনি অনুভব করেছিলেন সময়কে—অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের এক অভূতপূর্ব মিলন।

এই অনুভূতি তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। মাসের পর মাস ধরে তিনি এই রাস্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন, খুঁজে বের করেছেন পারিবারিক যোগসূত্র।

ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করেন, এটি কেবল একটি রাস্তা নয়, বরং একটি ভূখণ্ডের সময়রেখা, যা ইতিহাসের সাক্ষী।

এই অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ তিনি রচনা করেছেন ‘দ্য নর্থ রোড’ নামের একটি বই।

লেখকের বন্ধুও এই রাস্তার আকর্ষণ অনুভব করতে চেয়েছিলেন। তারা মিলিত হন স্টিলটনের ‘বেল ইন’ নামক একটি পুরনো হোটেলে।

এককালে এটি ছিল গ্রেট নর্থ রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামাগার। ১৮৩০-এর দশকে, এখানে প্রতিদিন ৪২টি ঘোড়ার গাড়ি এসে থামত।

হোটেলে আজও সেই সময়ের স্মৃতিচিহ্ন বিদ্যমান। মেনুতে পরিবেশিত হয় স্টিলটন চিজ, যা এই হোটেলের বিশেষত্ব।

দুপুরের খাবার সেরে তারা এ১ ধরে ওয়াটার নিউটনের দিকে যাত্রা করেন। এখানে পুরনো ‘নর্থ রোড’ মূল সড়ক থেকে আলাদা হয়ে গেছে।

শান্ত গ্রাম, সবুজ ঘাস, উইলো গাছের সারি—যেন এক পুরোনো দিনের ছবি। একসময় এখানে বিশাল রোমান শহর ছিল, যেখানে সৈন্য, ব্যবসায়ী, এবং নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা ছিল।

এরপর তারা নদী পার হয়ে সেন্ট রেমিগিয়াস চার্চের কাছে যান। এখান থেকে ‘হেরেওয়ার্ড ওয়ে’ নামের একটি পথ ধরে তারা এগিয়ে যান।

পথের ধারে, ঘাস এবং গাছের মধ্যে তারা একটি স্যাক্সন ক্রস খুঁজে পান। এরপর তারা বার্গলি হাউসের কাছাকাছি আসেন।

এখানে তারা সেই রহস্যময় সঙ্গীকে আবার দেখতে পান।

বার্গলি হাউস নির্মিত হয়েছিল এলিজাবেথ-১ এর উপদেষ্টা উইলিয়াম সিসিলের তত্ত্বাবধানে। এই অঞ্চলের সঙ্গে কবি জন ক্লেয়ারের গভীর সম্পর্ক ছিল।

১৮০৬ সালে ক্লেয়ার এই বাড়ির দেয়াল টপকে স্ট্যামফোর্ড থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক নতুন পথের সন্ধান পান, যা তার জীবন বদলে দেয়।

স্ট্যামফোর্ডের গির্জাগুলি, সরু পথ, এবং আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলি শহরটিকে যেন এক ভিন্ন রূপ দিয়েছে।

এখানকার ‘দ্য জর্জ’ নামের পুরনো একটি হোটেল এখনও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখানে একসময় ক্রোমওয়েল, প্রথম চার্লস, এবং ডিউক অফ কাম্বারল্যান্ড-এর মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বরা এসেছিলেন।

ঐতিহাসিক এই পথ ধরে হাঁটার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। লেখক ও তার বন্ধু সেই সন্ধ্যার স্মৃতিচারণ করতে করতে উপলব্ধি করেন, পুরোনো পথগুলি যেন এক অচেনা জগতের দিকে নিয়ে যায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *