বাদশার সঙ্গে মারামারি! আর্জেন্টাইন ‘পাঙ্ক গড’ লুকা প্রোদানের চাঞ্চল্যকর জীবন

আর্জেন্টিনার সঙ্গীত জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন লুকা প্রোদ্যান। ইতালীয়-ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এই শিল্পী আটের দশকে আর্জেন্টিনায় পা রেখেছিলেন, যখন দেশটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। তার সঙ্গীত, বিদ্রোহ আর জীবনবোধের এক মিশ্রণ তৈরি করেছিল, যা আজও আর্জেন্টিনীয়দের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

সম্প্রতি তার জীবন নিয়ে নির্মিতব্য একটি চলচ্চিত্র তাকে বিশ্ব দরবারে নতুন করে পরিচিত করতে চলেছে।

লুকা প্রোদ্যানের জন্ম ১৯৫৩ সালে ইতালিতে। শৈশব কেটেছে ইতালিতে, এরপর তিনি স্কটল্যান্ডের একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেন, যেখানে বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

শোনা যায়, স্কুল জীবনে রাজার সঙ্গে নাকি তার হাতাহাতিও হয়েছিল! প্রোদ্যান ছিলেন অস্থির প্রকৃতির মানুষ। কৈশোরে তিনি স্কুল থেকে পালিয়ে যান এবং এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান।

১৯৮০ সালে তিনি আর্জেন্টিনায় আসেন। ততদিনে তিনি মাদকাসক্তিতেও আক্রান্ত। এরপর তিনি “সুমো” নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন, যা আর্জেন্টিনীয় সঙ্গীতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

সেই সময় আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল খুবই কঠিন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখাচ্ছিল হাতে গোনা কিছু শিল্পী, তাদের মধ্যে প্রোদ্যান ছিলেন অন্যতম।

তিনি তার গানে সমাজের অনিয়ম, হতাশা, এবং বিদ্রোহের কথা তুলে ধরতেন। সুমোর গানগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা আর্জেন্টিনীয় তরুণদের মধ্যে নতুন এক উন্মাদনা সৃষ্টি করে।

সুমো’র সঙ্গীত ছিল পোস্ট-পাঙ্ক ঘরানার, তবে এর মধ্যে নতুন তরঙ্গ, রেগে এবং কুম্বিয়ার মতো বিভিন্ন ধারার মিশ্রণ ছিল। লুকা প্রোদ্যানের কণ্ঠ এবং মঞ্চে তার উপস্থিতি ছিল খুবই আকর্ষণীয়।

তার কণ্ঠের গভীরতা আর ভিন্ন ধরনের উপস্থাপনা আর্জেন্টিনীয় শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়।

কিন্তু এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জীবন ছিল সংক্ষিপ্ত। ১৯৮৭ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। প্রোদ্যানের মৃত্যুর পর সুমো ভেঙে যায়, তবে ব্যান্ডের সদস্যরা নতুন দল গঠন করে আর্জেন্টিনীয় সঙ্গীতে নিজেদের অবদান রেখে গেছেন।

লুকা প্রোদ্যানের জীবন নিয়ে তৈরি হতে যাওয়া চলচ্চিত্রটি তার শিল্পীজীবন এবং বিদ্রোহের গল্প বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে হয়তো প্রোদ্যান আরও বেশি মানুষের কাছে পরিচিত হবেন এবং সঙ্গীতের প্রতি তার ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *