শিরোনাম: ব্ল্যাক প্যান্থারের পরিচালক রায়ান কুগলার: নতুন সিনেমা, শোক এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন
বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়ান কুগলার। তাঁর নির্মিত সিনেমাগুলো শুধু বক্স অফিসে সফল নয়, বরং সংস্কৃতির মোড় ঘোরানো কাজ হিসেবেও প্রশংসিত। সম্প্রতি, তিনি তাঁর নতুন ছবি ‘সিনার্স’ নিয়ে কথা বলেছেন, যেখানে উঠে এসেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, শোক, এবং ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনার কথা।
কুগলারের সিনেমাজগত:
রায়ান কুগলার তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন ‘ফ্রুটভ্যাল স্টেশন’ (২০১৩) দিয়ে, যেখানে অস্কার গ্র্যান্ট নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের জীবনের শেষ দিনগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর তিনি ‘ক্রিড’ (২০১৫) সিনেমার মাধ্যমে ‘রকি’ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নতুন রূপে দর্শকদের সামনে হাজির করেন।
তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচিতি আসে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ (২০১৮) নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এটি শুধু একটি সুপারহিরো সিনেমা ছিল না, বরং আফ্রিকান সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল চিত্র যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এরপর তিনি ‘ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরএভার’ (২০২২) তৈরি করেন, যা অভিনেতা চ্যাডউইক বোসম্যানের প্রয়াণের পর শোকের ছায়ায় নির্মিত হয়।
‘সিনার্স’ এবং ব্যক্তিগত সংযোগ:
কুগলারের নতুন সিনেমা ‘সিনার্স’-এর প্রেক্ষাপট ১৯৩০-এর দশকের মিসিসিপি। এটি তাঁর পরিবারের শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
সিনেমাটিতে সেই সময়ের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, দাসপ্রথা, কু ক্লাক্স ক্ল্যানের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কুগলার জানান, এই সিনেমা বানানোর পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিশেষ করে তাঁর প্রয়াত চাচার কথা।
তাঁর চাচা ব্লুজ গানের একজন অনুরাগী ছিলেন, এবং তাঁর স্মৃতি থেকেই কুগলার এই সিনেমাটি বানানোর অনুপ্রেরণা পান।
অভিনেতা মাইকেল বি. জর্ডান এবং অন্যান্য:
কুগলারের সিনেমায় অভিনেতা মাইকেল বি. জর্ডানের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘সিনার্স’-এ জর্ডান দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
কুগলার জানান, জর্ডানের সৃজনশীলতা এবং অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তাঁদের একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এছাড়াও, সিনেমায় শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের চরিত্র রয়েছে, যারা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
ব্ল্যাক প্যান্থারের স্মৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ সিনেমার সাফল্যের পর, অভিনেতা চ্যাডউইক বোসম্যানের মৃত্যু কুগলারের জীবনে গভীর শোকের সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, এই সিনেমা বানানোর সময় তাঁরা সবাই একটি পরিবারের মতো ছিলেন, এবং বোসম্যানের অভাব তাঁদের অনেক কষ্ট দিয়েছে।
বর্তমানে, ‘ব্ল্যাক প্যান্থার ৩’ নিয়েও আলোচনা চলছে, যেখানে অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
রায়ান কুগলারের সিনেমাগুলো শুধু বিনোদনমূলক নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কাজগুলো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সংগ্রাম, সংস্কৃতি এবং আত্ম-পরিচয়ের গল্প বলে।
তিনি সব সময় চেষ্টা করেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রতিচ্ছবি তাঁর সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে।
রায়ান কুগলারের কাজের মাধ্যমে, আমরা দেখি কীভাবে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে দর্শকদের জন্য দারুণ কিছু সৃষ্টি করতে পারেন। তাঁর সিনেমাগুলো শুধু গল্প বলে না, বরং আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান