আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী খাবার: টমেটো-অলিভ অয়েলের মতোই স্বাস্থ্যকর?

শিরোনাম: তাঞ্জানিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার: স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি, বলছে গবেষণা

সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাঞ্জানিয়ার কিলিম্যানজারো অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেমন – কাঁচকলা, কাসাভা এবং গাঁজন করা কলার পানীয় (যাকে ম্বেগে বলা হয়), স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য খুবই উপকারী।

এই খাবারগুলো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের খাদ্যভ্যাসের মতোই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

গবেষণাটি করেছেন নেদারল্যান্ডসের র‍্যাডবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এবং তাঞ্জানিয়ার কেসিএমসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের এই গবেষণা ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তাঞ্জানিয়ার এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস শরীরের প্রদাহ কমায়। শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হলে নানা ধরনের রোগ, যেমন – আর্থ্রাইটিস ও আলঝেইমার্স-এর ঝুঁকি বাড়ে।

গবেষকরা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এর প্রমাণ পেয়েছেন। তারা ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৭৭ জন পুরুষের ওপর গবেষণাটি চালান। প্রথমে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে দেওয়া হয়।

এরপর তাদের পশ্চিমা ধাঁচের খাবার, যেমন – পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং স্প্যাগেটি দেওয়া হয়। খাবারের পরিবর্তনের ফলে তাদের শরীরে প্রদাহের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

অন্যদিকে, যারা পশ্চিমা খাবার ছেড়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার গ্রহণ করেছেন, তাদের শরীরে প্রদাহ কমেছে। এমনকি যারা নিয়মিতভাবে ম্বেগে পান করেছেন, তাদেরও স্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।

গবেষক দলের প্রধান, ড. গডফ্রে তেম্বা, এই ফলাফলে অবাক হননি। তিনি জানান, “আমরা যখন ৮০-৯০ বছর বয়সী বয়স্ক মানুষের সঙ্গে কথা বলি, তারা খুবই সুস্থ জীবন যাপন করেন। তাদের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নেই।

তারা ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করে আসছেন।”

তাঞ্জানিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস, যা মূলত কাঁচকলা, কাসাভা এবং ম্বেগে-এর উপর নির্ভরশীল, শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সরবরাহ করে। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রদাহ কমে আসে।

গবেষকরা মনে করেন, এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

তবে, এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গবেষকরা এখন স্থূলতা আছে এমন তাঞ্জানিয়ার মানুষের উপর ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব পরীক্ষা করছেন।

তারা দেখতে চান, এই খাদ্যাভ্যাস কিভাবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও, তারা তাঞ্জানিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসগুলি নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছেন।

ড. কুইরিজন ডি মাস্ট বলেন, “আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা রয়েছে। এমনকি তাঞ্জানিয়ার মধ্যেই বিভিন্ন উপজাতির খাদ্যাভ্যাস আলাদা।

উদাহরণস্বরূপ, মাসাই উপজাতির লোকেরা মূলত পশুজাতীয় খাবার গ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা খুবই কম।

বর্তমানে, আফ্রিকার দেশগুলোতে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অতিরিক্ত ওজনের মতো সমস্যা বাড়ছে।

তাই, এই গবেষণাটি আফ্রিকার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নতুন দিশা দেখাতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *